গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণে নববর্ষের শুভেচ্ছা কতটা আরামদায়ক জানা নেই। ঠিক যেমন জানা নেই দুর্নীতির লঙ্কাকান্ড নাকি গ্রীষ্মের দাবদাহ – কোনটা বেশি উত্তপ্ত করছে পারিপার্শ্বিককে। তবু এইরকম বহু না জানার মাঝেই আজ নববর্ষ। শুরু ১৪৩০-এর পথচলা। ভেতো বাঙালি, মেছো বাঙালির আর পাঁচটা পার্বণের মত এটাও অবশ্যই তারিয়ে তারিয়ে চেটেপুটে খাবার মতই আরও একটা।
যদিও এখন সময় অনেকটাই পালটে গেছে। ‘আমি কারে দেখিয়া দিব ঘোমটা গো, নাতজামাই আমার ন্যাংটা গো’ বলতে অভ্যস্ত বাঙালিও ভাবাবেগের ঢোঁক গিলতে বাধ্য হচ্ছে। ঘরের মেয়ে উমা বা জামাই শিবকে নিয়ে ঠাট্টা মস্করাতে অভ্যস্ত বাঙালি সংস্কৃতি গোবলীয় হানাদারিতে কিছুটা বিপর্যস্ত।
অষ্টমীতে ‘ময়দা’ খেয়ে নবমীতে 'পাঁঠা' খেতে অভ্যস্ত বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে কখন যেন নবরাত্রিতে নিরামিষের হুঁশিয়ারি। যদিও হুঁশিয়ারিটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিরামিষ না থেকে ক্রমশ আমিষের দিকে এগোচ্ছে। বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে কখন যেন মাথা গলিয়ে ঢুকে পড়েছে রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী। সেই বীভৎস নারকীয় ধ্বনির মাঝে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে ভাদু, টুসু, ইতু, নবান্ন।
আজান আর ঘণ্টাধ্বনির শব্দ পাশাপাশি শুনে বেড়ে ওঠা বাঙালি মনন এখন দ্রুত শিখে নিচ্ছে রামনবমীর দিন কোথায় গিয়ে জয়ধ্বনি দিলে ফায়দা হবে। অথচ কৃত্তিবাসী রামায়ণ পড়ে বেড়ে ওঠা আপামর বাঙালির কাছে এই সেদিন পর্যন্ত রাম ছিল নিতান্তই ঘরের মানুষ। রবীন্দ্রনাথের কথায়, “কৃত্তিবাসের সীতা ও রামচন্দ্র বাঙালির বড়ো প্রিয়জন, আত্মীয় অপেক্ষাও আত্মীয়।”
সময়টা ভালো নয়। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি মন থেকেও হয়তো অদূর ভবিষ্যতে মুছে যাবে মুঘল থেকে মৌলানা আজাদ। সংঘাত টিপুকে নিয়েও। মুঘলসরাই তো কবেই ঢাকা পড়েছে দীনদয়ালের ছায়ায়। অন্যদিকে বাঙালি বিপ্লবীদের লড়াইয়ের স্মৃতিবিজড়িত সেলুলারও যে কোনোদিন হয়তো বদলে যাবে বেমালুম। সেখানে অন্য কারোর নাম খোদিত হবে। যে আঘাত শুধু ইতিহাসে নয়। বরং তার চেয়ে অনেক বেশি এই আঘাত চিন্তায়, মননে, মস্তিষ্কে, সংস্কৃতিতে। সময় খারাপ, সময়টা ভালো নয় বলে বলে আরও অনেকটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তাতে বোধহয় ক্ষয় আটকানো যায় না। তাই আরও দেরি হয়ে যাওয়ার আগে…
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন