রাজ্যে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বাম কংগ্রেস আইএসএফ সমঝোতা আছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই সমঝোতা নিয়ে বেশ কিছু বিতর্ক সামনে এলেও আগ বাড়িয়ে কাউকেই চলে যেতে বলা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বাম শিবির থেকে। প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানও এই সমঝোতা বজায় রাখতে চেয়ে কয়েকদিন আগে চিঠি দিয়েছেন সোনিয়া গান্ধীকে। যদিও প্রদেশ সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর প্রস্তাব ঘিরে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
ভবানীপুর বিধানসভার আসন্ন উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেবার পক্ষে প্রস্তাব দিয়েছেন অধীর চৌধুরী। এখনও পর্যন্ত এই প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে এআইসিসির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে কংগ্রেস যদি শেষমেষ এই সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তিন দলের সমঝোতা আদৌ থাকবে কিনা সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
রাজ্যের শেষ বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চার পক্ষ থেকে বিজেপি তৃণমূল – এই দুই দলের বিরুদ্ধেই আক্রমণ শানানো হয়েছিলো। নির্বাচনের মাস খানেকের মধ্যে অবস্থার এমন কিছু পরিবর্তন হয়নি যে সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে বলে মত অনেকেরই। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস যদি এককভাবে প্রার্থী না দেবার সিদ্ধান্ত নেয় তা আগামী দিনে এই সমঝোতা টিকিয়ে রাখার পথে অন্তরায় হয়ে ওঠার সম্ভাবনা।
প্রশ্ন আরও আছে। এবারের নির্বাচনে সমঝোতা করে শূন্য আসনে পৌঁছে যাওয়া কংগ্রেস আদৌ কি এই সমঝোতা আগামী দিনে বজায় রাখতে আগ্রহী? লাখ টাকার প্রশ্ন বোধহয় সেটাই। শূন্য পাওয়া বামেদের সঙ্গে সমঝোতা বজায় রেখে চলার থেকে ক্ষমতায় ফেরা তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করলে আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে লাভবান হতে পারে কংগ্রেস বলে অনুমান রাজনৈতিক মহলের একাংশের এবং কংগ্রেসেরও। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করে রাজ্য থেকে কিছু আসনে জয়ী হতে পারলে জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের আসন বাড়ার সম্ভাবনা। সেই অঙ্কও যে কংগ্রেসের মাথায় একেবারে নেই তেমনটাও নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে উপনির্বাচনে প্রার্থী না দিয়ে তবে কি সেই বার্তাই পাঠাতে চাইছে কংগ্রেস?
রাজনীতিতে শেষ কথা কখনোই আগেভাগে বলা সমীচীন নয়। পরিস্থিতির বদল যে কোনো মুহূর্তে হতেই পারে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে দু-চারটে আসনের বিনিময়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করলে জাতীয় স্তরে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। যদিও এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে অতীত। যেভাবে গত ১০ বছরে রাজ্যের একাধিক কংগ্রেস বিধায়ক, নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বা কংগ্রেস ভাঙানো হয়েছে তাতে অনেক কংগ্রেস কর্মীরই ক্ষোভ আছে। একগুঁয়ে সেইসব কংগ্রেস নেতা কর্মীরা একদিকে যেমন বামেদের সঙ্গে সমঝোতা মানতে পারেন না তেমনই আপত্তি থাকার সম্ভাবনা তৃণমূলকে নিয়েও।
তবে একথা ঠিক, যদি ভবানীপুর উপনির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস কোনো প্রার্থী না দেয় সেক্ষেত্রে আগামী দিনে রাজ্যে বাম কংগ্রেস আইএসএফ জোট না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন