"মুসাফির হুঁ ইয়ারো, না ঘর হ্যায় না ঠিকানা, ... বস চলতে জানা" - ৮৬ তম জন্মদিনে গুলজার

গুলজার
গুলজার ফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

“মহামারী লগী থী, ঘরো কো ভাগ লিয়ে থে সভী মজদুর, কারীগর, মশীনে বন্দ হোনে লগ গই থী শহর কী সারী, উনহী সে হাথ পায়ো চলতে রহতে থে…” - কবিতার নাম "মজদুর মহামারী"। স্যোশাল মিডিয়ায় সেই কবিতা নিজেই পাঠ করে শুনিয়েছেন। কবিতার প্রতি ছত্রে নাড়ীর টানে, শিকরের টানে ঘরে ফিরতে চাওয়া শ্রমিকদের কথা। আর যিনি এই মর্মস্পর্শী শব্দবন্ধের স্রষ্টা তাঁর নাম সম্পূরণ সিং কালরা। মানুষ যাঁকে গুলজার সাহেব নামেই চেনে। ১৯৩৪ সালের ১৮ ই অগাস্ট পাঞ্জাবে তাঁর জন্ম। আজ তাঁর ৮৬ তম জন্মদিন।

বর্তমানে সারা পৃথিবী এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছে। বহুমানুষের জীবনে ঘনিয়ে এসেছে ঘোর অনিশ্চয়তা। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্বিসহ অবস্থা এবং তাদের কঠিন পরিস্হিতির কথা কলমের ভাষায় তুলে ধরেছেন কবি, লেখক এবং গীতিকার গুলজার। নিজের ৮৬ তম জন্মদিনের প্রাক্কালে তিনি ট্যুইট করেছেন - "দৌড়ে দৌড়ে পা মেলাচ্ছি, জীবন কত দ্রুত চলছে"।

সহিত্যের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা, শাস্ত্রীয় সংগীত এবং চিত্রকলার ও অনুরাগী গুলজারের চলচ্চিত্রে জগতে অপূরণীয় অবদান। তিনি কখনো গীতিকার, কখনো চিত্রনাট্য রচয়িতা, কখনো চলচ্চিত্র নির্মাতা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি কবি গুলজার। তাঁর কবিতার জগত জুড়ে ইতিহাস, শিল্প, সংগীত এবং আধ্যাত্মবাদে অনায়াস পদচারণা।

শিশু অবস্থায় মা কে হারিয়েছিলেন। বেশ কিছুটা একাকিত্বের মধ্যেই বেড়ে ওঠা। সেসময়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতা সংকলন 'দ্য গার্ডেনারের' উর্দু সংস্করণ পড়ে পাল্টে যায় তাঁর জীবন বোধ। পরবর্তীতে মুম্বাইতে তাঁর নতুন জীবন তাঁকে স্বাধীন এবং আরও একাকী করে তোলে।

ছোট মাঝারি নানান রকম পেশার মধ্য দিয়ে উল্টেপাল্টে জীবনকে দেখা এবং সাহিত্য, সংগীত ও চিত্রকলার জগত উন্মোচিত করেছিল, শিল্পের জীবন, শিল্পীর জীবন।

এরপর তিনি যুক্ত হন ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন (আইপিটিএ), প্রোগ্রেসিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং পাঞ্জাবী সাহিত্য সভার সাথে। এর মাধ্যমেই সংস্পর্শে আসেন সরদার জাফরী, কৃষণ চন্দর, কাঈফী আজমী, সাহির লুধিয়ানভি, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, গুরওয়েল সিং পান্নু, সুখবীর, রাজিন্দর সিং বেদি এবং বলরাজ সাহানীর মতো কিংবদন্তী কবি, লেখক, অভিনেতা এবং শিল্পীদের। পাল্টে যায় জীবনের গতিপথ। এরপরেই ক্রমশ সামনে আসেন গীতিকার, কবি, লেখক গুলজার।

বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার বিমল রায়ের সংস্পর্শে আসার পর একে একে যা ঘটে চললো তার সবটাই ইতিহাস।

১৯৬২ সালে গুলজারের প্রথম প্রকাশিত ছোট গল্পের বই 'চৌরাস রাত' , ১৯৬৩ তে প্রকাশিত হয় 'জানম'। কবি জীবনের দীর্ঘ সাধনায় সাহিত্যে রেখেছেন অনন্য অবদান, যার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০২ সালে পেয়েছেন সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার। সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা সংকলন, "দ্য গার্ডেনারের" হিন্দি অনুবাদ সম্পন্ন করেছেন কবি। যা গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। একই সঙ্গে শিশুদের জন্য লেখা কবিগুরুর কবিতার হিন্দি অনুবাদ 'নিন্দীয়া চোর'-ও প্রকাশ পেয়েছে।

তিনি চলচ্চিত্রে গীতিকার হিসেবে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৮৮ সালে ইজাজত ছবিতে 'মেরা কুছ সামান' গানটি রচনার জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। সুবোধ ঘোষের জতুগৃহ উপন্যাস থেকে গৃহীত এই ছবিটির পরিচালনাও তিনিই করেছিলেন। এছাড়া তিনি ‘মাচিস', 'হুতুতু' ইত্যাদি ছবির পরিচালনা করেন।

গীতিকার হিসেবে ১৯৬৩ তে এস ডি বর্মণের সঙ্গে বন্দিনী ছবিতে কাজ করেছিলেন। এছাড়া আঁধি, মৌসম ছবি পরিচালনা করেন। আর ডি বর্মন, সলিল চৌধুরী, বিশাল ভরদ্বাজ, এ আর রহমানের সঙ্গে কাজ করেছেন। ২০০৪ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০১৩ সালে দাদা সাহেব ফালকে উপাধিতে ভুষিত হন। এছাড়াও বহু জাতীয় পুরস্কার, ২১ টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, একটি এ্যাকাডেমি এ্যাওয়ার্ড ও একটি জার্মানি এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ১৯৮০ তে টিভি সিরিয়ার মির্জা গালিব, ১৯৯৩ তে কিরদার পরিচালনা করেছিলেন। ২০০৯ সালে "স্লাম ডগ মিলেনিয়ার" এ 'জয় হো' গানের জন্য অস্কার পুরস্কার পান।

দেশের গর্ব, এই গীতিকার, কবি, সাহিত্যিক, পরিচালককে জন্মদিনে পিপলস রিপোর্টারের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in