দীর্ঘ দুই বছরের প্রতীক্ষার অবসান করে, আগামী ২৯শে জুলাই রূপোলী পর্দায় আসতে চলেছে পরিচালক শৈবাল মিত্রের ছবি ‘আ হোলি কন্সপিরেসি (A Holy Conspiracy)'। এটি 'কোর্টরুম ড্রামা' ঘরনার ছবি। যেখানে মূল চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে দুই প্রবাদপ্রতিম ভারতীয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও নাসিরউদ্দিন শাহকে। এই ছবিতে অভিনেতাদ্বয়কে বসন্ত কুমার চ্যাটার্জি ও অ্যান্থন ডিসুজা নামক আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে।
সাম্প্রতিককালে ভারতবর্ষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার প্রতিফলনে নির্মিত এই ছবি। যেখানে উঠে আসবে দেশের অন্দরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার প্রতিচ্ছবি। ছবিটির মূল বিষয় বস্তুটি যেহেতু কোর্টরুম ড্রামা, সেহেতু একটি বিশেষ মামলাকে কেন্দ্র করে রয়েছে এই ছবি। এই মামলার দুইপ্রান্তে পরিচালক রেখেছেন দুই আইনজীবীকে। যাদের জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠবে দেশের বর্তমান অবস্থা। ভারতীয় সংবিধানের অধীনে থাকা আইনব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যথোচিত প্রশ্ন তুলেছেন পরিচালক।
সূত্রের খবর, হিল্লোলগঞ্জ নামের একটি আদিবাসী গ্রামের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবি। যেখানকার আদিবাসীরা সকলেই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। সেখানে কুণাল জোসেফ নামের একজন বিজ্ঞানের শিক্ষক। যিনি বিজ্ঞানের আগে বাইবেলের জেনেসিস পড়াতে নারাজ হন। তা নিয়ে শুরু হয় শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে দ্বন্দ্ব। জেলেও যেতে হয় কুণালকে। এই মামলার আঙ্গিকে কেস লড়তে আসেন দুই আইনজীবী বসন্ত-অ্যান্থন জুটি। ছবিটিতে দিল্লিভিত্তিক এক সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করেতে দেখা যাবে কৌশিক সেনকে। এটি একটি জাতীয় ভাষাভাষী চলচ্চিত্র হতে চলেছে। যেখানে চরিত্রদের আদিবাসী, বাংলা, হিন্দি ও মূলত ইংরেজিতে কথা বলতে দেখা যাবে। ইতিমধ্যে ছবিটি বিভিন্ন বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে।
পরিচালক এই গল্পের মূল সূত্রটি পেয়েছেন, আমেরিকান নাট্যকার জেরম লরেন্স এবং রবার্ট ই.লি –এর লেখা নাটক ‘ইনহেরিট দ্য উইন্ড’ (Inherit the Wind) থেকে। এই নাটক অবলম্বনে ইতিপূর্বে দুটি হলিউড ছবি তৈরি হয়েছে, যেখানে ছবির নাম উক্ত নাটকটির নামেই রাখা হয়েছিল। ১৯৬০ সালে স্ট্যানলি ক্রেমার ও ১৯৯৯ সালে ড্যানিয়েল পেট্রি এই ছবি দুটি নির্মাণ করেন যা সিনে-সমালোচক মহলে আলোচিত হয়েছিল।
এইবার সেই নাটকের অনুপ্রেরণাতেই ভারতীয় ছবি ‘আ হোলি কন্সপিরেসি’ -এর চিত্রনাট্য লিখেছেন বাঙালি পরিচালক শৈবাল মিত্র। তাঁর এই পদক্ষেপকে বেশ ব্যতিক্রমী মনে করেছেন সিনে-সমালোচকরা। এই মুহূর্তে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা আর তার প্রেক্ষিতে ধর্মীয় অনুশাসন একটি জ্বলন্ত বিষয়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা, যেমন - পাঠ্যসূচিতে বিজ্ঞানের বদলে বৈদিক বিজ্ঞান রাখার ঘটনার পাশাপাশি, আদিবাসীদের দমন করার প্রবণতা।
এসব মিলিয়ে একাধিক জ্বলন্ত ইস্যু নিয়ে গবেষণা করেই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন শৈবাল। এই পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষক কি আদৌ নিজের মতপ্রকাশ করতে পারবেন! ছবিতে এই তর্কই উস্কে দিয়েছেন পরিচালক। ছবির দ্বন্দ্ব ও তর্ক যাতে জাতীয়স্তর অবধি পৌছায় তার জন্য ছবির বিষয়কে ব্যাপ্ত করেছেন তিনি। সেই চাহিদা থেকেই ছবিতে কাস্ট করেছেন দেশের দুই ভিন্ন প্রান্তের দুই প্রতিভাবান অভিনেতাকে। আইনজীবীর চরিত্রে ‘সৌমিত্র-নাসির’ –এর কাস্টিং ও পোস্টারে তাঁদের দেখে সিনে-প্রেমীদের মনে আলাদা উত্তেজনা তৈরি করেছে। এই ‘কোর্টরুম ড্রামা’র পরতে পরতে তর্কের মধ্যে দিয়ে দ্বন্দ্ব-বিশ্লেষণে দেখা যাবে আইনজীবী বসন্ত কুমার ও অ্যান্থনকে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ছবির কাজে হাত দিয়েছিলেন পরিচালক শৈবাল। ছবির চিত্রনাট্য শেষ করে নির্বাচিত দুই অভিনেতাকে জানান তিনি। কেউই হাতছাড়া করতে চাননি তাঁদেরকে অফার করা চরিত্রটি। তারপরই শুরু হয় ছবির শ্যুটিং-এর কাজ। ২০১৯-এ মুক্তি পাবার কথা ছিল ছবিটির। করোনা পরিস্থিতির জন্য পিছিয়ে যায় ছবির রিলিজ। এবার প্রায় দুবছর বাদে রিলিজ করতে চলেছে ছবিটি।
উল্লেখ্য, নাসির-সৌমিত্রর জুটিকে প্রথম ও শেষবারের মতো বড়পর্দায় দেখতে পাওয়া ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক অবিস্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। ছবিতে প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা সৌমিত্রকেও শেষবারের মতো রূপোলী পর্দায় দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন ভারতীয় দর্শকরা। এছাড়াও এই ছবিতে দেখা যাবে অমৃতা চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক সেন,বিপ্লব দাশগুপ্ত প্রমুখ অভিনেতাকে। আর ঠিক একমাস বাদে অর্থাৎ ২৯ শে জুলাই বড় পর্দায় দেখা যাবে এই বহু প্রতীক্ষিত ছবিটি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন