গত ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর বেলেঘাটায় একটি নাট্য উৎসবের আয়োজন করেছিল পূর্ব কলকাতা বিদূষক নাট্যমণ্ডলী। কিন্তু কেক উৎসবের অজুহাত দেখিয়ে তাঁদের সেই নাট্য উৎসব বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে বুধবার বেলেঘাটা সুকান্ত মঞ্চের সামনে একটি সভার আয়োজন করা হয়। CPI(M)-র যুব সংগঠন DYFI-র পক্ষ থেকে প্রতিবাদ পত্র দেওয়া হয় অভিনেতা অমিত সাহাকে।
অভিনেতা অমিত সাহা এবং নাট্যদলের সভাপতি অরূপ খাঁড়াকে মারধরের ঘটনায় সরব হয়েছে সাংস্কৃতিক মহল থেকে টলিপাড়ার একাংশ। বিশিষ্ট থিয়েটার অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে অভিনেতা বিমল চক্রবর্তী সহ আরও অনেকেই মুখ খুলেছেন।
বুধবার নাট্যকর্মীদের প্রতিবাদ সভায় সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও, প্রতিবাদের ভাষা হারাননি অনির্বাণ। তৃণমূল এবং বিজেপি দুই দলকেই এক হাত নিয়েছেন তিনি।
তাঁর কথায়, "আমি প্রতিবাদ করছি, আরো অনেকের সঙ্গে এটা জেনেই, যে এই প্রতিবাদ ব্যর্থ হবে। যাঁর গায়ে হাত উঠেছে, তাঁর গায়ে আবার হাত উঠতে পারে শীঘ্রই, এবং যিনি হাত তুলেছেন, তিনি তাঁর সাহসে বলীয়ান হয়ে বাংলা মায়ের সুযোগ্য সন্তানের অনেকগুলো সার্টিফিকেট ঘরে বাঁধিয়ে রাখবেন। কে জানে! হয়তো কালের অদ্ভুত নিয়মে একদিন বাংলার সংস্কৃতি মন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন, দল বদলালে হয়তো ভারতেরও। এটা বা এরকম কিছুই হয়তো হবে। আমি এই ঘটনাকে বুঝে নিতে চাইছি রাজনৈতিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে।"
সম্প্রতি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছিলেন অমিতাভ বচ্চন এবং শাহরুখ খান। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়েই তাঁরা বাক স্বাধীনতা এবং অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারের সিনেমার ক্ষতির বিষয় তুলে ধরেন।
সেই বিষয়টি উল্লেখ করে অনির্বাণ বলেন, "সারা ভারতের মুক্তমনা মানুষ সেদিন হাততালি দিয়ে উঠেছেন। যারা মঞ্চে ছিলেন, তারাও দিয়েছেন। তার কিছুদিন পরেই অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া মার খেয়ে গেলেন, নাট্য উৎসব আয়োজন করার জন্য। একই রাজ্যে! কেন? কারণ অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া পশ্চিমবঙ্গের বোধ করি একটি ভোটকেও ডিস্টার্ব বা পেট্রনাইজ করতে পারেন না। অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান পারেন। তাই, চলুন, আমরা নাটক ছেড়ে একটা মার খাওয়ার উৎসবের দিকে এগিয়ে যাই।"
এরপরেই তৃণমূলকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অভিনেতা বলেন - "সারা ভারতবর্ষের সিনেমা ও থিয়েটার অভিনেতারা যেন জানতে পারেন, পশ্চিমবঙ্গে এক অভূতপূর্ব আনন্দযজ্ঞ শুরু হয়েছে, ভোট রাজনীতিতে কাজে আসে না, এমন শিল্পীদের মেরে ঠান্ডা করে দেওয়া হচ্ছে। এই শিক্ষা সারা দেশ আমাদের রাজ্য থেকেই পাক। আমার এর পরের অভিনয় ১৫ই জানুয়ারি রবীন্দ্র সদন মঞ্চে। এসে মেরে যান।"
অভিনেতা বিমল চক্রবর্তী তৃণমূলকে ধিক্কার জানিয়ে বলেন, বর্তমান বাংলার সরকার যে বারবার শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপর আক্রমণ শানাচ্ছে, এটাই তার প্রমাণ। প্রবীণ নাট্যকর্মী পঙ্কজ মুন্সীর কথায়, থিয়েটার ভালো মানুষ গড়তে সাহায্য করে। এরা সেটাই বন্ধ করতে চায়। বিশিষ্ট নাট্যকর্মী তথা অভিনেত্রী শ্রাবন্তী ভট্টাচার্য জানান, এটা উৎসবের সময় নয়। এটাই প্রতিবাদের সময়। আক্রান্তদের উপর ফের আক্রমণ হতে পারে। তা যাতে না হয়, তাই প্রস্তুত থাকতে হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন