অভিনেতা অমিত সাহার উপর হামলার অভিযোগ উঠল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন ‘নাট্যদল বিদূষক নাট্যমণ্ডলীর’ সদস্যগণ। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলী দুষ্কৃতীবাহিনী তাঁদের মারধর করে বলপূর্বক ‘নাট্যদল বিদূষক নাট্যমণ্ডলীর’ মুক্তমঞ্চের নাট্য উৎসব বন্ধ করে দিয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পূর্ব কলকাতা বিদূষক নাট্যমণ্ডলী। এই ঘটনায় অমিতের পাশে দাঁড়িয়েছেন তথাগত মুখোপাধ্যায়, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের মতো ব্যক্তিত্বরা।
বাংলা চলচ্চিত্র ও ওয়েব সিরিজের জনপ্রিয় মুখ অমিত সাহা। ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’, ‘ভটভটি’র মতো চলচ্চিত্রে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সদ্য মুক্তি পেয়েছে অভিনেতার ‘বিরহী ২’ ওয়েব সিরিজও। ফেসবুকে এক ভিডিও-র মাধ্যমে পুরো ঘটনাটি বিস্তারিত জানিয়েছেন অমিত।
তিনি বলেন, "আমাদের দল 'পূর্ব কলকাতা বিদূষক নাট্যমণ্ডলী'-র তরফে আগামী ২৪ এবং ২৫ ডিসেম্বর মুক্তমঞ্চের নাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। আমরা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিলাম বেলেঘাটার রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র রোডের লাগোয়া রাসমেলার মাঠে। এই মর্মে আমরা স্থানীয় থানা এবং পৌরপ্রধান সহ বিভিন্ন জায়গায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কিন্তু আজ সকালে আমরা অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখি তীব্র মাইক বাজছে। শুনলাম কেক উৎসব হচ্ছে।"
তিনি জানান, "ছোট পরিসর, এত জোরে মাইক বাজলে আমাদের অনুষ্ঠানটি বিঘ্নিত হবে। এই মর্মে কথা বলার জন্য আমরা স্থানীয় পৌরপ্রতিনিধির অফিসে যাই। তাঁরা ছিলেন না, আমরা তখন সেখানে অপেক্ষা করি। এমন সময় আমাদের কাছে ফোন আসে, মাঠে যেখানে ডেকরেশনের কাজ হচ্ছিল সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা ছুটে আসি। অলোক দাস সহ তৃণমূলের কিছু কর্মী সেখানে ছিলেন।"
অভিনেতা বলেন, "গাড়ি থেকে নামার পরেই আমাদের জিজ্ঞেস করা হয় কোথায় থাকেন? আমি বলি কাদাপাড়ায় থাকি। তারপর আমাদের আর কোনও কথা বলতে দেওয়া হয়নি। চড়-চাপ্পড়, ধাক্কা মারতে মারতে আমাদের মাঠ থেকে সোজা রাস্তায় এনে ফেলা হয়। কেক অনুষ্ঠানের দিন কীভাবে আমাদের অনুষ্ঠান করা হয় সে নিয়েই কথা বলতে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের কোনও কথাই বলতে দেওয়া হয়নি। বলা হয়, এখানে শুধু কেক উৎসবই হবে। অন্য কোনও উৎসব হবে না।"
তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অমিত বলেন, "এটা কী করে সম্ভব? একটা কথা বলার কোনও সুযোগ না দিয়ে ঘাড় ধাক্কা, গায়ে হাত তোলা! এটা কীরকম গণতান্ত্রিক নিয়ম? এই উৎপাতের কারণে আমরা অপমানিত। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই উৎপাত, শারীরিক নিগ্রহ, এই গা জোয়ারির বিরুদ্ধে আমাদের হাতে যা যা করার আছে সেটা করব।"
এই ঘটনা প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় একরাশ ক্ষোভ উগরে অভিনেতা তথাগত জানিয়েছেন, নাট্য উৎসব করতে গিয়ে অমিতের মতন শক্তিশালী, প্রতিভাবান অভিনেতাকে কিছু পলিটিকাল ক্যাডারের হাতে যেভাবে প্রহৃত হতে হয়েছে, তার চেয়ে ঘৃণ্য, লজ্জাজনক ঘটনা এই মুহূর্তে আর কিছু হতে পারে না। শুধুমাত্র নাটক করার অপরাধে যদি গায়ে হাত তুলে শক্তি প্রদর্শন করতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে ক্ষমতার দম্ভ আর অশিক্ষা এমন জায়গাতে পৌঁছেছে যেখানে পতন আসন্ন।
তিনি আরও বলেন, শিল্প এবং শিল্পের মুখ যদি এ রাজ্যেও বারবার লাঞ্ছিত হয় শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্ররোচনা আর মতাদর্শের পার্থক্যের কারণে, তবে রাজ্যে ক্ষমতার উদ্দেশ্য নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। আসলে সবার মধ্যেই ফ্যাসিস্ট রাজনীতির সমর্থক রয়েছে, বেরিয়ে আসাটা শুধু সময় আর পরিস্থিতির অপেক্ষা। অমিত সাহাকে যে নাট্য উৎসব বন্ধ করে দিতে হল এ পরিস্থিতিতে সে লজ্জা শুধু রাজ্যের বা সরকারের নয়, সে লজ্জা আমাদের সবার। অমানবিক এই মানুষদের প্রতি, তাদের রাজনৈতিক নীতির প্রতি শুধুই মনে ঘৃণা জমা থাকল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন