২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ হারায় প্রায় ৬৩ শিশু সহ মোট ৮০ জন। সেইসময় নিজের টাকায় অক্সিজেন কিনে বাকি রোগীদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ডাঃ কাফিল খান। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর নামেই মামলা দায়ের করে তাঁকে দীর্ঘদিন জেলে বন্দী রাখে যোগী সরকার। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত শাহরুখ খানের নয়া ব্লকবাস্টার ছবি ‘জওয়ান’-এ সেই ঘটনার সত্যতাকে তুলে ধরার জন্য অভিনেতা ও ছবির পরিচালককে ধন্যবাদ জানালেন কাফিল খান।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কাফিল খান জানিয়েছেন, “শাহরুখ খান স্যার এবং ‘জওয়ান’ ছবির পরিচালক অ্যাটলি কুমারকে গোরক্ষপুর হাসপাতালের ওই ভয়াবহ ঘটনাকে তাঁদের ছবিতে তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ।” পাশাপাশি, একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি ছবিতে দেখানো ঘটনা এবং বাস্তবের ঘটনার মধ্যে পার্থক্যগুলিকেও নির্দিষ্ট করেছেন।
২০১৭ সালে ওই দুর্ঘটনার সময় ডাঃ কাফিল খান একজন জুনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন বাবা রাঘব দাস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগে। সেই সময়েই হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে হঠাৎ করেই প্রাণ হারাতে শুরু করেন রোগীরা। মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল শিশু। ওই ঘটনায় ৬৩ জন শিশু-সহ মোট ৮০ জন রোগী প্রাণ হারায়। সেই সময় ডাঃ কাফিল খান নিজের টাকায় ও উদ্যোগে অক্সিজেন কিনে বাকি রোগীদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন।
ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ওই চিকিৎসককে ত্রাণকর্তা হিসেবে মনে করা হলেও কিছুদিন পরই উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার তাঁকে তাঁর পদ থেকে বরখাস্ত করে। পাশাপাশি, সরকারি নির্দেশে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি, দুর্নীতি ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার মামলা দায়ের করে। প্রায় ৯ মাস জেল খাটতে হয় তাঁকে।
উল্লেখ্য, শাহরুখ খানের সাম্প্রতিক ছবি ‘জওয়ান’-এও প্রায় একই ঘটনা দেখানো হয়েছে। ছবিতে কাফিল খানের মতোই একটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী সান্যা মালহোত্রা, যার নাম ডঃ ইরাম। ছবিতে অক্সিজেনের অভাবে ৬৩ জন শিশুর মৃত্যু দেখানো হয়েছে। তার পর নিজের চেষ্টাতেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করেন ডঃ ইরাম। বাস্তবের মতো ছবিতেও সরকারের চক্ষুশূল হয়ে গ্রেফতার হতে হয় ইরামকে। তবে বাস্তবে মূল অপরাধীরা শাস্তি না পেলেও ছবিতে দেখানো ঘটনায় দোষীরা শাস্তি পেয়েছেন।
ওয়াকিবহাল মতে, কাফিল খানের প্রতি সম্মান দেখাতেই ওই ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। কাফিল খান এই নিয়ে টুইটারে (বর্তমানে X) জানিয়েছেন, “আমি এখনও জওয়ান দেখিনি, তবে অনেকেই আমাকে মেসেজ করে জানাচ্ছেন যে ছবিতে দেখানো ওই ঘটনা আমার সঙ্গে হওয়া ঘটনাকে মনে করাচ্ছে। তবে বাস্তবের সঙ্গে সিনেমার ঘটনার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। জওয়ান ছবিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী-সহ অন্যান্য মূল অপরাধীরা শাস্তি পেয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে আমি এবং বাকি ৮১টি পরিবার আজও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছি। এই ঘটনাটিকে তুলে ধরার জন্য শাহরুখ খান স্যার এবং পরিচালক অ্যাটলি স্যারকে অনেক ধন্যবাদ।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন