জনপ্রিয় আমেরিকান ইউটিউবার এমা চেম্বারলিন এবছরের ‘Met Gala Meet 2022’ – এ অলঙ্কার প্রস্তুতকারী সংস্থা কার্টিয়-র গয়না পরে যান। সেই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া মাত্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পাতিয়ালার মহারাজা ভূপিন্দর সিং এর এই হারটি ১৯২৮ সালে তৈরি হয় পরে ১৯৪৮ -এ সরকারি কোষাগার থেকে তা হারিয়ে যায়। প্রায় ৯০ বছর পর সেটি দেখা যায় এমার গলায়।
আন্তর্জাতিক সেলিব্রেটিদের ফ্যাশনের মেলা বসে মেট গালা অনুষ্ঠানে। মেট গালা হচ্ছে নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত আর্টস কস্টিউম ইনস্টিটিউট মেট্রোপলিটন মিউজিয়ামের একটি নিজস্ব অনুষ্ঠান। মেট গালাকে আনুষ্ঠানিকভাবে 'কস্টিউম ইনস্টিটিউট গালা' বলা হয়। এটি 'মেট বল' নামেও পরিচিত। প্রতিবছর মে মাসের প্রথম সোমবার এই অনুষ্ঠানটি হয়। এই বছর ২মে মেট গালা অনুষ্ঠিত হয়।
এ বছরের Met Gala Meet – এ পোশাক নিয়ে নজর কেড়েছেন কিম কার্ডেশিয়ান। আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কেনেডির ৪৫ তম জন্মদিনে যে পোশাক পরে গান গেয়েছিলেন মেরিলিন মনরো, সেই ঐতিহাসিক পোশাক পরিধান করে সেদিন অনুষ্ঠানে ফটোশ্যুট করেন কিম। পরে যদিও তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে অনুষ্ঠানের অভ্যন্তরে।
সেদিন মেট গালার অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় আমেরিকান ইউটিউবার এমা চেম্বারলিন লুই ভেটনে (প্যারিসের ফ্যাশন কোম্পানি) এর পোশাক পরেছিলেন এবং অলঙ্কার প্রস্তুতকারী সংস্থা কার্টিয় থেকে বানিয়ে দেওয়া হয় তাঁর মাথায় পরার মুকুট (টিয়ারা) ও চোকার (গলার হার)।
চোকারটি পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবার পর, তা আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, এমার পরিহিত চোকারটির সাথে হুবহু মিল পাওয়া যায় পাতিয়ালার রাজা ভূপিন্দর সিং এর গলার হারের।
সূত্রের খবর, অলঙ্কারটি ১৯২৮ সালে তৈরি হয়, বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম হীরে দিয়ে, যা ভূপিন্দর সংগ্রহ করেন হীরে উত্তোলক সংস্থা ‘ডি বিয়ারস’ এর কাছ থেকে। হারটি বংশানুক্রমিক ভাবে পেয়ে থাকেন রাজার উত্তরসূরিরা। চোকারটি একদিন হঠাৎই হারিয়ে যায় কোষাগার থেকে। সেই ঘটনার অর্ধশতাব্দী পর প্যারিসের কোম্পানির কাছে আসে চোকারটি। দেখা মাত্রই তারা কিনে নেন সেই মহা মূল্যবান গয়না, দাবী কার্টিয়র।
গয়নাটি ভালো করে দেখলে বোঝা যায়, চোকার বা গলাবন্ধ হারটির মধ্যমণি ওই মহা মূল্যবান হীরে, সেটাকে ঘিরে রয়েছে ২৯৩০ টি হীরে ও বার্মিজ রুবি। মনে করা হয় ইতিহাসে যতগুলি মহা মূল্যবান অলঙ্কার রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান এই হারটি।
তবে এখন প্রশ্ন, কিভাবে লন্ডনের অনুষ্ঠানে এমার গলায় উঠে এল এই গয়না। এমার গলায় ওই হারের ছবি দেখার পর ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন নেটিজনেরা। তাঁরা বলেন, এ ঘটনা আসলে বেদনাদায়ক স্মৃতি। ১৯৪৮ সালে পাতিয়ালার কোষাগার থেকে খোয়া যায় হারটি। তারপর লন্ডনের আন্তজাতিক মঞ্চে কেউ সেই চুরি করা গয়না পরে মুখ দেখান কি করে!
রাজপরিবারের কাছের একজন জানান, কণ্ঠহারটি পাতিয়ালার মহারাজার সম্পত্তি। স্বাধীনতার পর ভারত থেকে চুরি যাওয়া একটি ইতিহাস সম্পৃক্ত দলিল। সেলেব্রিটিদের ফ্যাশন প্রদর্শনের পাতি গয়না নয়। এই ঘটনাকে অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অপমানজনক বলে দাবিও করেন তিনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন