হিন্দি রাষ্ট্রভাষা। এমন দাবি গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে প্রায়ই শোনা যায়। এবার সেই সুর যেন উঠে এল বলিউড অভিনেতা অজয় দেবগণের ট্যুইটে। গত কয়েক দিনের সিনেমা জগতের বক্স অফিস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, 'পুষ্পা', 'কেজিএফ ২'-এর মত দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাই দাপিয়ে বেড়িয়েছে এর আগে 'বাহুবলী' বিরাট সাফল্য পায়। প্রযোজককে এনে দেয় কয়েকশো কোটি টাকা।
সেই সাফল্যে গর্বিত এক কন্নড় তারকা কিচা সুদীপ এক অনুষ্ঠানে এসে সগর্বে জানিয়েছিলেন, ‘হিন্দি রাষ্ট্রভাষা নয়।’ সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ট্যুইট করেন অজয় দেবগণ। সুদীপকে কটাক্ষ করে হিন্দিতে লেখেন, ‘আমার ভাই, আপনার মতে যদি হিন্দি আমাদের রাষ্ট্রভাষা নাই হয়, তাহলে আপনাদের মাতৃভাষায় যে সিনেমাগুলি হয়, সেগুলি হিন্দিতে ডাব করে মুক্তি পায় কেন? হিন্দি আমাদের মাতৃভাষা এবং রাষ্ট্রভাষা ছিল, আছে আর সর্বদা থাকবে। জন গণ মন।’
এখানে দুটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। সম্প্রতি দেশে ইংরেজির পরিবর্তে হিন্দিতে ভাব বিনিময় করার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বলা হয়েছিল, সরকারি কাজে হিন্দি ভাষার মাধ্যমে দুজন ব্যক্তি ভাব বিনিময় করবেন। তাতেই নাকি দেশের ঐক্য বজায় থাকবে, এমনটাই মনে করে কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রের এই ‘হিন্দি আগ্রাসন’ মনোভাবের প্রতিবাদে গর্জে ওঠে গোটা দক্ষিণ ভারত। অজয়ের টুইটেও এদিন দেশের শাসকদলের সুর উঠে আসায় তুঙ্গে ওঠে বিতর্ক।
দ্বিতীয় বিষয় হল, বহুল জনপ্রিয় অনেক দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা হিন্দি ডাবের পর রমরমা বাজার করে নিয়েছে সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে। বরং বলা যায়, হিন্দি ডাবিং সিনেমা মুক্তি পাওয়ার জেরেই দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার বাজার প্রসারিত হয়েছে।
উল্টোদিক থেকে জবাব এসেছে। অজয়কে ‘স্যর’ সম্বোধন করে সুদীপ ট্যুইট করেন, ‘আমি পুরোপুরি ভিন্ন প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করেছিলাম। সেটা ভুলভাবে আপনার কাছে পৌঁছেছে। আমি কেন এমনটা বলেছি, তা দেখা হলে জানাব। কাউকে আঘাত দেওয়া, প্ররোচিত করা কিংবা বিতর্ক উস্কে দেওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল না।’ এমনকী অজয়ের হিন্দি টুইটের জবাবে তিনি কন্নড় ভাষায় লিখলে পরিণতি কী হত, তা নিয়েও খোঁচা দেন তিনি।
পরে অবশ্য ভুল স্বীকার করে অজয় জানান, অনুবাদে কিছু খামতি ছিল। তাই এই বিভ্রান্তি। তার জবাবও দিয়েছেন সুদীপ। তিনি লেখেন, এই কারণে সব কিছু না জেনে কোনও ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেওয়া ঠিক নয়। কোনও সৃষ্টিশীল বিষয়ে অজয় ট্যুইট করলে তিনি বেশি খুশি হতেন। নেটাগরিকরাও অজয়ের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘ভারতে কোনও রাষ্ট্রভাষা নেই, সেকথা অজয়ের জানা উচিত।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন