আমির খানের পর এবার উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের রোষানলে পড়লেন জনপ্রিয় বলিউড অভিনেতা ঋত্বিক রোশন ও খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থা জোমাটো।
রবিবার, সোশ্যাল মিডিয়ায় 'ঋত্বিক রোশন মাফি মাঙ' এবং 'বয়কট ঋত্বিক রোশন' হ্যাশট্যাগ দিয়ে লাগাতার প্রচার চালিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল অললাইন ফুড ডেলিভারি ও খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থা জোমাটো।
জোমাটোর নতুন বিজ্ঞাপনে কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে ঋত্বিক রোশনকে। বিজ্ঞাপনটি মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (AI) অ্যাপের সাহায্যে বানানো। যার ফলে মোবাইল, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ যেখান থেকেই জোমাটো অন করা হবে, ব্যবহারকারীর জিপিএস লোকেশন ধরে ওই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেই শহরের পরিচিত রেস্তোরাঁ এবং খাবারের নাম ব্যক্তির কাছে পৌঁছে যাবে। জোমাটোর এই অভিনব উদ্যোগ গ্রাহকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
দিল্লি, কলকাতা, কোচি, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, সিমলা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদাভাবে রেস্তোরাঁ এবং খাবারের নাম সহযোগে বিজ্ঞাপন রয়েছে, এই বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছেন ঋত্বিক। যার জেরে কৌতূহল বেড়েছে গ্রাহকদের মনে।
এরই মাঝে জোমাটোর এই নয়া বিজ্ঞাপন নিয়ে তীব্র আপত্তি প্রকাশ করেছেন মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়নের মহাকাল মন্দিরের দুই পুরোহিত। অন্যান্য শহরের মতই উজ্জয়নের জোমাটোর বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে ঋত্বিক বলছেন - 'উজ্জয়ন মে থা, সোচা মহাকাল সে থালি মাঙ্গালু'। মন্দিরের পুরোহিতদের বক্তব্য, অভিনেতার এই বক্তব্য হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে।
তাঁদের অভিযোগ, 'ওরা আমাদের নিয়ে তামাশা করেছে। অন্য কোনও ধর্ম হলে জ্বালিয়ে দিত। কিন্তু আমরা শান্তিপ্রিয়। এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের হওয়া উচিত।' পুরোহিতদের এই বিষ্ফোরক মন্তব্যের জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়। বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও জোমাটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মহাকাল মন্দির ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আশিস সিং-এর কাছেও গিয়েছিলেন ওই দুই পুরোহিত।
তীব্র আক্রমণের মুখে পড়ে বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোমাটো। নিজস্ব ট্যুইটে তারা জানিয়েছে, "আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। কারণ, আমাদের কখনই কারোর বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। এই 'মহাকাল'-এর অর্থ 'মহাকাল' মন্দির নয়। এখানে উজ্জয়নের বিখ্যাত 'মহাকাল' রেস্তোরাঁর কথা বলা হয়েছে।" জোমাটো আধিকারিকদের কথায়, উজ্জয়নের এই রেস্তোরাঁর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তাই বিজ্ঞাপনে উজ্জয়নের থালির কথা বলা হয়েছিল।
তবে জোমাটোর ট্যুইটের পরও পরিস্থিতির বিশেষ কোনও বদল হয়নি। উগ্র হিন্দুত্ববাদী হিসাবে পরিচিত মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র পুলিশকে এফআইআর-র নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, ঘটনা সংক্রান্ত যাবতীয় ভিডিও, তথ্য খতিয়ে দেখে তাঁকে বিশদে জানাতে বলেছেন, যাতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন