দক্ষিণ ভারতীয় তথ্যচিত্র পরিচালক লীনা মণিমেকালাইয়ের নতুন তথ্যচিত্র ‘কালী’-র পোস্টার সামনে আসার পরই তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশের বাইরে ও ভিতরে। মঙ্গলবার (৫ জুলাই) দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশ পুলিশ লীনা মণিমেকালাইয়ের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করেছে।
লীনা পরিচালিত তথ্যচিত্রের পোস্টারে দেখা যায়, হিন্দু দেবী কালীর রূপে সেজে এক মহিলা ধূমপান করছেন এবং তাঁর হাতে রয়েছে এল.জি.বি.টি.কিউ সম্প্রদায়ের একটি পতাকা। ছবির এই দৃশ্যই হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে বলে অভিযোগ।
কানাডার প্রখ্যাত ‘আগা খান মিউজিয়াম’–এ তথ্যচিত্রটি নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। পরে বিতর্ক দেখা দিলে মিউজিয়াম কতৃপক্ষ দর্শকদের উদ্দেশ্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে তথ্যচিত্রের পোস্টারটি সরিয়ে ফেলে। তথ্যচিত্রে ব্যবহৃত কালীর পোস্টার ও বিতর্কিত ছবিগুলি সরানোর জন্য সোমবার টরন্টো শহরের ‘আগা খান মিউজিয়াম’ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিল ভারতের হাইকমিশন। ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ।
ক্ষমাপ্রার্থনার চিঠিতে ‘আগা খান মিউজিয়াম’ কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, টরন্টো মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি বিভিন্ন জাতিগত ও সাংস্কৃতিক পটভূমির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে মতামত একত্রিত করেছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থী এই ‘আন্ডার দ্য টেন্ট’ প্রকল্পের জন্য কানাডিয়ান বহু সংস্কৃতির অংশ হিসেবে তাদের স্বতন্ত্র অনুভূতির খোঁজ করেছে। শিল্পকলা প্রদর্শনের মাধ্যমে আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়াকে উৎসাহিত করাই ছিল এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্যেই শনিবার (২ জুলাই) আগা খান মিউজিয়ামে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করা হয়েছিল। বিভিন্ন ধর্মীয় অভিব্যক্তি এবং বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখাই ছিল সেই অনুষ্ঠানের বিষয়।
মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছহেন, ‘আন্ডার দ্য টেন্ট’ -এর ১৮টি ছোট ভিডিওর মধ্যে একটি এবং তার সাথে থাকা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলি অসাবধানতাবশত হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের সদস্যদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে। তাই এটি মিউজিয়াম থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উপস্থাপনাটি আর মিউজিয়ামে দেখানো হচ্ছে না।
অন্যদিকে, মাদুরাইয়ের বাসিন্দাদের একাংশ এই তথ্যচিত্র নির্মাতার পক্ষ নেন। এই বিতর্কের মধ্যেই পরিচালক লীনা মণিমেকালাই এটি নিয়ে মুখ খোলেন। তাঁর দাবি, “ছবি বানানোর জন্য টরেন্টো মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। একটি সন্ধ্যার গল্প নিয়ে এই ছবি তৈরি করেছি, যখন টরেন্টোর রাস্তায় মা কালী আবির্ভূত হন। যদি আপনি এই ছবিটা দেখেন তাহলে লীনা মানিমেকালাইকে গ্রেফতারির দাবি জানাবেন না। বলবেন, লীনা তোমায় আমরা ভালোবাসি। আমার ‘কালী’ কথা বলবেন বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে। ভালোবাসা যে শ্রেষ্ঠ ধর্ম, সেই বার্তা দেবে।
পরিচালক তাঁর দর্শকদের উদ্দেশ্যে ট্যুইট করে আরও বলেন, “আপনি যদি ছবিটি দেখেন, তবে হ্যাসট্যাগ ব্যবহার করুন। লিখুন লাভ ইউ লীনা। আমাদের ছবির পাশে থাকুন।” তিনি আরও বলেছেন, “আমার হারানোর কিছু নেই। সারাজীবন নির্ভয় কণ্ঠের সাথে আমি থাকতে চাই। এই ছবির মূল্য যদি আমার জীবন হয়, তবে ছবির জন্য আমি আমার জীবন দিয়ে দেব।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন