জন্মের সময় নাম ছিলো হেমা মুঙ্গেশকর। পরবর্তী সময়ে যে নাম হয়ে যায় লতা। ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন সুরসম্রাজ্ঞী। বাবা দীননাথ মুঙ্গেশকর। মা সেবন্তী। কিংবদন্তী শিল্পীর জীবন থেমে গেল রবিবার ৬ ফেব্রুয়ারি।
এক সাংগীতিক পরিবারে জন্ম হয় লতার। বাবা দীননাথ ছিলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী এবং অভিনেতা। পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান লতা ছোটো থেকেই আগ্রহী ছিলেন সঙ্গীতের প্রতি। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে সঙ্গীতের হাতেখড়ি বাবার কাছেই।
১৯৪২ সালে বাবার মৃত্যুর পর মাত্র ১৩ বছর বয়সে মুঙ্গেশকর পরিবারের ঘনিষ্ঠ মাস্টার বিনায়কের হাত ধরে তিনি মারাঠি চলচ্চিত্র ‘কিতি হাসাল’-এ প্রথম কণ্ঠ দেন। যদিও সেই গান পরে চলচ্চিত্র থেকে বাদ পড়ে। ১৯৪৩ সালে মারাঠি চলচ্চিত্র গজাভাউ-তে তিনি প্রথম হিন্দি গান করেন।
১৯৪৫-এ মুম্বাই মাস্টার বিনায়কের হাত ধরেই মুম্বাই চলে আসেন লতা মুঙ্গেশকর। উস্তাদ আমন আলি খানের কাছে সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। এছাড়াও ১৯৪৫-এ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে ছোটো চরিত্রে অভিনয় করেন দুই বোন লতা ও আশা। ১৯৪৮-এ মাস্টার বিনায়কের মৃত্যুর পর সঙ্গীত পরিচালক গুলাম হায়দর লতাকে পরিচয় করিয়ে দেন তৎকালীন খ্যাতনামা প্রযোজক শশধর মুখার্জির সঙ্গে। ১৯৪৮-এ শহীদ বলে এক ছবিতে গান গাওয়ালেও তাঁর গলা অত্যন্ত সরু বলে সেই গান বাদ দিয়ে দেন শশধর মুখার্জি। যদিও ১৯৪৮ সালেই গুলাম হায়দরের হাত ধরে মজবুর ছবিতে ‘দিল মেরা তোড়া’ গাইবার সুযোগ পান লতা। যে গান সাড়া জাগায় সঙ্গীতমহলে। এরপর ১৯৪৯-এ মহল চলচ্চিত্রে মধুবালার লিপে তাঁর গান ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ প্রথম বড়ো হিট।
১৯৫০ থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি লতাকে। অনিল বিশ্বাস, শঙ্কর জয়কিষাণ, নৌশাদ, শচীন দেব বর্মণ, শার্দূল সিং প্রমুখ সঙ্গীত পরিচালক একের পর এক চলচ্চিত্রে প্লে ব্যাকের সুযোগ দেন লতাকে। পরবর্তী পর্যায়ে হেমন্ত মুখার্জি, সলিল চৌধুরী, খৈয়াম, দত্তা নায়েক, সাজিদ হুসেন, কল্যাণজী আনন্দজী, উষা খান্না, মদন মোহন, লক্ষ্মীকান্ত প্যারেলাল, ভূপেন হাজারিকা থেকে শুরু করে অনু মালিক, নাদিম শ্রাবণ, এ আর রহমান, দিলীপ-সমীর, আনন্দ মিলিন্দ – প্রত্যেকের সঙ্গীত পরিচালনায় একের পর এক যুগান্তকারী গান গেয়েছেন লতা। ১৯৫৮তে সলিল চৌধুরীর সুরে ‘মধুমতী’ চলচ্চিত্রে ‘আ যা রে পরদেশী’ গান দিয়েই তাঁর প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। ১৯৬২ তে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে বিশ সাল বাদ ছবিতে ‘কহি দীপ জ্বলে কহি দিল’ গান তাঁকে দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত করে।
দেশি বিদেশি প্রায় ৩৬টি ভাষায় গান গেয়ে সারা জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। তাঁর পাওয়া প্রধান প্রধান পুরস্কারের তালিকায় আছে -
১৯৬৯ – পদ্মভূষণ
১৯৭৪ – গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস – সবথেকে বেশি গান গাইবার স্বীকৃতি
১৯৮০ – সাম্মানিক নাগরিকত্ব – সুরিনাম
১৯৮৯ – দাদা সাহেব ফালকে
১৯৯৭ – রাজীব গান্ধী পুরস্কার
১৯৯৯ – পদ্মভূষণ
২০০০ – লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট – আই আই এফ এ, লন্ডন
২০০১ – ভারত রত্ন
২০০১ – মহারাষ্ট্র রত্ন
১৯৭২, ১৯৭৫ এবং ১৯৯০ সালে জাতীয় পুরস্কার
ফিল্মফেয়ার – ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৫, ১৯৬৯, ১৯৯৩ (লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট)
বিএফজে পুরস্কার – ১৯৬৪, ১৯৬৭, ১৯৬৮, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৭৩, ১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৮৫
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন