নাইটিংগেলের প্রতি তাঁর চার শব্দের শ্রদ্ধাঞ্জলি টুইট করার কিছুক্ষণ পরে, লতা মুঙ্গেশকরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর ইন্সটাগ্রামে এক ভিডিও পোস্ট করলেন প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমান। যে ভিডিওতে উঠে এসেছে 'দিল সে' এবং 'রং দে বাসন্তী'-এর মতো চলচ্চিত্রে কীভাবে লতা মুঙ্গেশকর তাঁকে সহায়তা করেছিলেন।
এর আগে, প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর মৃত্যু সংবাদ প্রকাশিত হবার পর রহমান নাইটিংগেলের পায়ের কাছে বসে থাকা তাঁর একটি ছবি পোস্ট করে টুইট করেছিলেন: "ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং প্রার্থনা।"
ভিডিওতে, রহমান লতা মুঙ্গেশকর সম্পর্কে দীর্ঘ কথা বলেছেন। ভিডিওতে রহমানকে বলতে শোনা যায় - "আজ আমাদের সকলের জন্য খুব, খুব দুঃখের দিন।" তিনি জানিয়েছেন: "লতাজির মতো কেউ কেবল একজন গায়ক নন, কেবল একজন আইকন নন। (তিনি) আমি মনে করি তিনি আত্মার একটি অংশ। ভারতের চেতনার একটি অংশ। হিন্দুস্তানি সঙ্গীত, হিন্দি কবিতা, উর্দু কবিতা, বাংলা এবং আরও অনেক ভাষায় তিনি গেয়েছেন এবং এই শূন্যতা আমাদের সবার জন্য চিরকাল থেকে যাবে।"
লতা মঙ্গেশকরের প্রতি তাঁর বাবার শ্রদ্ধার কথা স্মরণ করে রহমান বলেন: "তাঁর কথা বলতে গেলেই আমার বাবার কথা মনে পড়ে যায়। আমি যখন ছোটো ছিলাম তখন তিনি মারা যান। তাঁর বিছানার কাছে লতাজীর একটি ছবি থাকতো। তিনি জেগে উঠে সেই ছবি দেখে অনুপ্রাণিত হতেন এবং রেকর্ডিংয়ে যেতেন। আমার লতাজীর প্রতি শ্রদ্ধা সেখান থেকেই শুরু।"
নাইটিঙ্গেলের সাথে তাঁর সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে রহমান বলেন: " আমি খুব ভাগ্যবান যে তাঁর সাথে কয়েকটি গান রেকর্ড করতে পেরেছি। তাঁর সাথে গান গাইতে পেরে, তাঁর অনুষ্ঠানের অংশ হতে পেরে, আমি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি শিখেছি। স্টেজে পারফর্ম করার গুরুত্বপূর্ণ বহু বিষয় আমি জেনেছি।"
এ আর রহমান বলেন, একবার এক লাইভ শোয়ের আগে তিনি দেখেছিলেন, রিহার্সাল শেষ হওয়ার পরে বিকেল ৪ টায় তিনি তাঁর সহকারীর সাথে ঘরে ফিরে যান এবং প্রতিটি গান আবার গাইতে শুরু করেন।
রহমান জানিয়েছেন, "খুব ধীরে ধীরে, প্রতিটি শব্দ স্পষ্টভাবে। আমি সেখান দিয়ে চলে গেছিলাম এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'তিনি কি শোয়ের জন্য অনুশীলন করছেন?' সেই একটি ঘটনা আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে। এর পর, আমি যখনই কোনো শো’তে যাই, আমি বাইরে যাই তখন তানপুরা নিয়ে অনুশীলন করি। ওয়ার্ম-আপগুলি সেরে ফেলি। প্রতিটি শব্দ যেভাবে উচ্চারিত হওয়া উচিৎ, যেভাবে গাওয়া উচিত।"
লতা মুঙ্গেশকর প্রতিটি গানের জন্য যে সময় দিতেন এবং পরিশ্রম করতেন সে সম্পর্কেও উল্লেখ করেছেন এ আর রহমান। তিনি বলেন, "একদিন, আমি তাঁর সাথে কথা বলার সময় তিনি জানান, ‘সেই সময়, নৌশাদ সাহেব আমাদের রিহার্সালের জন্য ১১ দিনের জন্য আসতে বাধ্য করতেন।' আমি বলেছিলাম, 'কতদিন সময় লাগবে? আমি এক্ষুনি গান শিখে নেব।' তবুও, তিনি জোর দিয়েছিলেন যাতে আমরা ১১ দিনই রিহার্সালের জন্য আসি'।"
রহমান বলেন: "তাহলে আপনি প্রতিটি গানের গভীরতা বুঝতে পারবেন। এতে প্রচুর সময়, ভালবাসা, আধ্যাত্মিকতা, আবেগের মিশে রয়েছে। তরুণ প্রজন্মের জন্য, আমি মনে করি যে কোনও কিছুকে গভীরভাবে শেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ, এতে বিশ্বাস করতে হবে। সব দিতে। কোনো ফলের আশা না করেই। রহমান জানিয়েছেন, "বিগত শতাব্দীর ভারতীয় সঙ্গীতের উত্তরাধিকারের শেষ স্তম্ভগুলির মধ্যে একটির থেকে আমি সম্ভবত এই ধরনের জিনিস শিখেছি।"
রহমান তাঁর বক্তব্য শেষ করার আগে বলেন: "এক বিশাল শূন্যতা ঘটতে চলেছে। যদিও আমাদের কাছে তাঁর গানের সম্পদ আছে, তবু তাঁর শারীরিকভাবে না থাকা এতো বড়ো শূন্যতা যা পূরণ করা খুব কঠিন। আমি জানি যে শত শত এবং হাজার হাজার গায়ক আছেন, যাঁরা তাঁর গানে অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং গাইছেন এবং সম্ভবত এটিকে তাদের নিজস্ব উপায়ে আরও অনেকদূর নিয়ে যাচ্ছেন৷ "তবুও, আমি মনে করি তাঁর প্রজন্ম যে ভিত্তি স্থাপন করেছে - তিনি, রফি সাহেব, কিশোর দা, মান্না দে, শাকিল সাহেব, নওশাদ সাহেব, এস ডি বর্মণ, সলিল চৌধুরী ( যাঁরা সকলেই কিংবদন্তি) - এমন কিছু যা আমি আমার বাকি জীবনের জন্য সত্যিই মূল্যবান। আমরা যা করতে পারি তা হল, এই কিংবদন্তীদের থেকে শিখে চলা, যাঁরা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ঈশ্বর তাঁর আত্মার মঙ্গল করুন।"
- with inputs from IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন