গত শুক্রবার (১০ই মে), পরিচালক সৌম্য সেনগুপ্তের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের বাংলাছবি 'মৃত্যুপথযাত্রী' প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। ছবির বিষয়টি নতুন ও পরীক্ষাধর্মী বলে দাবী ছবির পরিচালক-প্রযোজক-কলাকুশলীদের। এই ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে পরিচালক বলেছেন, এই ছবির মূল উদ্দেশ্য হল একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জীবনের শেষ ১২ঘণ্টা সময়কে পর্দায় দেখানো। অভিনেতা রাহুল এপ্রসঙ্গে বলেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ জানে না কখন সে মারা যাবে। কিন্তু এখানে তাঁর চরিত্রটি (আসামি) জানে যে তার জীবন মাত্র ১২ ঘন্টা বাদেই শেষ হয়ে যাবে। এটা বুঝে, অভিনয়ের মাধ্যমে বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা কঠিন কাজ। চরিত্রটি জানে যে, এই মৃত্যুতে রোম্যান্স নেই, সম্মান নেই এবং শেষ মুহূর্তে তাকে মানসিক সমর্থন দেওয়ার মতোও কেউ নেই। ফলে এই চরিত্রের সঙ্কটকে ফুটিয়ে তোলার জন্য অভিনয় শিল্পী হিসেবেও তাঁকে বিভিন্ন পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। চরিত্রের সঙ্গে একাত্মবোধ করতে প্রায় ১৫দিন নিজেকে ঘরে বন্দি রেখেছিলেন রাহুল। জানা গিয়েছে, ছবির ডাবিংয়ের সময়ে তাঁর গলা থেকে রক্তক্ষরণ হয়। সেই সমস্যা সামলেই ছবির কাজ শেষ করেন অভিনেতা।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকারে অভিনেতা আরও বলেন, “শ্যুটিং শুরু হওয়ার ১৫ দিন আগে আমি বাড়িতে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। একা একা থাকতাম, কারও সাথে কথা বলিনি। আমার পরিচালক সৌম্যও বিষয়টি নিয়ে খুব ভাল গবেষণা করেছেন। তিনি আমাকে প্রচুর পড়াশোনার বই ও অভিনয়ের সুবিধার্থে নানা উপকরণ সামগ্রী দিয়েছিলেন। পরিচালক আলিপুর এবং দমদম সংশোধনাগারে গিয়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামির সাথে কথা বলেছেন ও তাঁদের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করেছেন।”
পরিচালক সৌম্য বলেন, 'মৃত্যুপথযাত্রী' একটি পরীক্ষামূলক সিনেমা। ফিল্মটি কাল্পনিক হলেও বাস্তব ঘটনা দ্বারা আধারিত। ছবিটি যখন প্রি-প্রোডাকশন স্তরে ছিল তখনই গবেষণা শুরু করেন তিনি। কারাদণ্ডের আসামিদের নিয়ে মনস্তত্ব বিষয়ক বেশ কিছু বই পড়া, ছবি দেখা, এবং উকিল, পুলিশ, আসামিদের সাথে কথা বলা ও জেল ম্যানুয়াল, আইপিসি ধারা এবং স্বাধীন ভারতে বেশ কয়েকটি মৃত্যুদণ্ডের মামলার উদাহরণ সেনগুপ্তকে এই ছবির (মৃত্যুপথযাত্রী) প্লট ও চিত্রনাট্য তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়তা করেছিল।
তিনি আরও বলেন, দর্শকদের দেখাতে চেয়েছিলেন একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জীবনের শেষ ১২ ঘন্টা সময় কেমন হতে পারে। তাঁর মতে, দর্শকদের জানা প্রয়োজন যে, এই সময়ে একজন মানুষকে কতটা অপরাধবোধ, মানসিক অশান্তি ও মৃত্যুভয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
ছবির পরিচালকের বক্তব্য, ভালোবাসা নিয়ে যদি চলচ্চিত্র করা যায়, বাস্তব জীবন নিয়ে চলচ্চিত্র হয়, তবে মৃত্যু নিয়ে চলচ্চিত্র নয় কেন? 'মৃত্যুপথযাত্রী' তার প্রথম ফিচার ফিল্ম। এর আগে কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন সৌম্য। ছবির প্রযোজক কান সিং সোধা বলেছেন, “মৃত্যুপথযাত্রী আমার হৃদয়ের খুব কাছের কারণ এটি আমাকে মানুষের জীবন সম্পর্কে চিন্তা করায়।”
ছবি তৈরির স্বার্থে পরিচালক ও অভিনেতারা বিভিন্ন নির্ভীক পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে এরম অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। বিশেষ করে কোন উল্লেখযোগ্য চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ করতে হয়। বাংলা ছবির পরিচালক অভিনেতাদের এই অভ্যাসের মধ্যে থাকা আসলে সিনেমার জন্য আশার খবর।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন