রায়গড়ের মনোরম পরিবেশে একটি জমি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবসরপ্রাপ্ত এনআরআই কেতন কাক্কাড এবং তার প্রতিবেশী বলিউড মেগাস্টার সালমান খানের মধ্যে এক অপ্রীতিকর বিরোধ শুরু হয়েছে।
কাক্কাডের সাম্প্রতিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের পর অভিনেতা সালমান খান গুগল, ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার অন্যান্য সামাজিক প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি তাঁর প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে দেওয়ানী মানহানির মামলা করেছেন।
বিষয়টি ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের। ওইসময় তরুণ এনআরআই কাক্কাড তাঁর অবসরকালীন আবাস তৈরির জন্য রায়গড়ে একটি ছোট জমি কেনার পরিকল্পনা করেন। বিক্রেতা সংস্থার মাধ্যমে তখনই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় কিংবদন্তি বলিউড লেখক সেলিম খানের।
সেলিব্রিটি খানরা কাক্কাডকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, এলাকাটি অত্যন্ত ভাল এবং কাক্কাডকে তাঁদের প্রতিবেশী হিসাবে পেয়েও তাঁরা খুশি হবেন। এই প্লট খান পরিবারের ১০০ একরের অর্পিতা ফার্মস-এর সংলগ্ন ছিলো।
এরপরেই ১৯৯৬ সালে কাক্কাড ২.৫০ একরের প্লটটি কিনেছিলেন। পরে তিনি এটিতে একটি ছোট গণেশ মন্দির তৈরি করেন এবং কয়েক বছর পরে, সেখানে তিনি মাঝে মাঝে ছুটি কাটানোর জন্য একটি পরিবেশ-বান্ধব ১২০-বর্গফুটের খড়ের কুঁড়েঘর তৈরি করেন।
দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সদ্ভাব ছিলো এবং যখনই কাক্কাডরা তাদের প্লটে যেতেন তখন অর্পিতা ফার্মেও যাতায়াত করতেন। গত ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ এই ফার্মেই সালমান খানকে একটি বিষহীন সাপ কামড়ায়।
২০১৪ সালে, কাক্কাড অবসর নেন এবং ভারতে ফিরে আসেন। রায়গড়ে নিজেদের প্লটে স্ত্রী অনিতার সাথে থাকবার জন্য তিনি একটি ছোট বাড়ি তৈরি করতে আগ্রহী হন এবং ভবিষ্যতে সেখানে একটি 'আশ্রম' তৈরি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
কাক্কাদ দাবি করেছেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে, খান পরিবার হঠাৎ করে তাঁর সম্পত্তিতে তাঁদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। কাক্কাডের বক্তব্য অনুসারে, "বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও, আমাদের সেখানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না... বন ও রাজস্ব বিভাগের স্থানীয় আধিকারিকরাও আমাদের সাহায্য করছেন না।"
এর পরেই কাক্কাড বিষয়টির মীমাংসায় সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নেন এবং সেখানেই তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই সময়েই তিনি ইউটিউবে কিছু সাক্ষাত্কারও দিয়েছিলেন।
এই ঘটনার পরেই সালমান খান ৮ জানুয়ারী, কাক্কাদ এবং অন্যদের বিরুদ্ধে আইন সংস্থা, DSK লিগাল-এর মাধ্যমে "একদম ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং অযৌক্তিক অভিযোগ" আখ্যা দিয়ে সবকিছুই তাঁর খ্যাতি নষ্ট করার জন্য "ইচ্ছাকৃতভাবে করা হচ্ছে" বলে মামলা করেন।
বিষয়টি অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অনিল লদ্দাদের সামনে আসে, যিনি কাক্কাডের আইনজীবী আভা সিং এবং আদিত্য প্রতাপের সময়ের আবেদনের ভিত্তিতে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত এটি স্থগিত করেছেন।
সালমান খান সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত "লোড/আপলোড করা, পোস্ট করা এবং বিভিন্ন অপমানজনক এবং মানহানিকর বিষয়বস্তু প্রকাশ" করার অভিযোগও এনেছেন। তাঁর মতে, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা এবং অসৎ ইচ্ছা থেকে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে "উস্কানিমূলক, অপ্রমাণিত" বিষয় দিয়ে "গুরুতর এবং অপূরণীয় ক্ষতি" ঘটানো হচ্ছে।
অভিনেতা আরও দাবি করেন যে, কাক্কাডের প্লটকে মহারাষ্ট্র সরকার "অবৈধ" বলে বাতিল করেছে। অথচ তার জন্য তিনি খান পরিবারকে দোষারোপ করেছেন। কাক্কাড এমনও অভিযোগ করেছেন যে সুপারস্টার সালমান খান 'ডি-কোম্পানি' (পলাতক মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম কাসকর) এর সাথে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সংযোগ স্থাপন করেছিলেন এবং অর্পিতা ফার্মে বেআইনি/অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছিল।
কাক্কাডের এই ধরণের বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে, মেগাস্টার উল্লেখ করেছেন যে কাক্কাড বেআইনিভাবে গণেশ মন্দির করায়ত্ত/দখল করেছেন।
মামলায় সালমান খান, কাক্কাদ এবং অন্যান্য আসামীদের মানহানিকর বিষয়বস্তু প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে লোড/আপলোড করা, পোস্ট করা/পুনরায় পোস্ট করা, টুইট করা/রিটুইট করা, মিডিয়া ইন্টারভিউ দেওয়া, সংশ্লিষ্ট, যোগাযোগ, হোস্টিং, ইস্যু করা, প্রিন্ট করা, প্রকাশ করা, প্রচার করা থেকে বিরত রাখার স্থায়ী আদেশ চেয়েছেন।
সালমান খান সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কাছে "তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করতে এবং/অথবা প্রত্যাহার করতে, সরিয়ে নিতে, ব্লক/সীমাবদ্ধ/অক্ষম করার জন্য, বর্তমান মামলায় তার জন্য মানহানিকর সমস্ত বিষয়বস্তু, অন্য সমস্ত মাধ্যম যেখানে যা হোস্ট করা হয়েছে বা বিদ্যমান আছে সেখান থেকে প্রত্যাহার করার জন্য আদালতকে অনুরোধ করেছেন৷ তিনি দাবি করেছেন যে কাক্কাড, এবং অন্য তিনজন - সন্দীপ ফোগাট, পারস ভাট এবং উজ্জ্বল নারায়ণ-কে অবশ্যই মিডিয়ার মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে এবং আইনি মামলার খরচ মিটিয়ে দিতে হবে৷
কাক্কাড সুপারস্টারের আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন "একটি ভুল বোঝাবুঝি" হয়েছে যা মিটিয়ে নেওয়া হবে। পাশাপাশি তিনি নিজের জমিতে প্রবেশাধিকার এবং সেখানে একটি ছোটো বাড়ি বানানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কাক্কাড আরও জানিয়েছেন "বর্তমানে তিনি, তাঁর স্ত্রী অনীতা মালাডের একটি এক কামরা ফ্ল্যাটে আছেন, দুজনেই কোমরবিডিতে ভুগছি, তাই আমাদের খোলা প্লটটির জন্য খুব বেশি সময় বের করতে পারি না৷ আমাদের খান বা কারও সঙ্গে একেবারেই কোনও শত্রুতা নেই এবং আইনি নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করব।"
(Except for the headline, this story has not been edited by People's Reporter and is translated and published from a syndicated feed.)
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন