সত্যজিৎ রায়। নামটাই যথেষ্ট বাঙালিদের কাছে। শুধু বাংলা বা ভারতবর্ষ নয় গোটা বিশ্ববাসীর মনের মনিকোঠায় যার অবাধ বিচরণ তিনিই কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকার তথা সাহিত্যিক, সঙ্গীত পরিচালক, চিত্র নাট্যকার, গীতিকার সত্যজিৎ রায়। বাঙালির আবেগ তিনি। পৃথিবীতে বাস করে চন্দ্র সূর্য না দেখা আর সত্যজিতের সিনেমা না দেখা দুটোই একই ব্যাপার'_ বিখ্যাত জাপানি পরিচালক কুরোসায়া এভাবেই শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন বন্ধু সত্যজিতকে।
১৯২১ সালের ২ রা মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সবার প্রিয় মাণিক। বাবা স্বনামধন্য শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও মা সুপ্রভা দেবী। পিতামহ ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। খুব অল্প বয়সেই পিতৃবিয়োগ হওয়ায় অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কাটে তাঁর শৈশব। ১৯৪০ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সাম্মানিক বিএ পাশ করার পর তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন বিজ্ঞাপনের জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার হিসেবে।
সালটা ১৯৪৯। বিখ্যাত ফরাসি চলচ্চিত্র পরিচালক জঁ রনোয়ার কলকাতায় দ্য রিভার ছবির শ্যুটিং করতে আসেন। আর এখানেই তাঁর সাথে সাক্ষাৎ ঘটে সত্যজিৎের। এরপর ১৯৫০ সালে তিনি লন্ডনে গিয়ে ভিত্তোরিও দে সিকার লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে সিনেমাটি দেখেন। আর এখান থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখেন চলচ্চিত্রের। তারপর শুরু পথ চলা।
১৯৫৫ সালের ২৬ শে আগস্ট মুক্তি পায় তাঁর কালজয়ী চলচ্চিত্র 'পথের পাঁচালি'।এরপর নির্মাণ করেন, 'অপরাজিত', 'পরশ পাথর', 'জলসাঘর', 'অপুর সংসার', 'দেবী', 'তিনকন্যা', 'অভিযান', 'মহানগর', 'কাপুরুষ মহাপুরুষ', 'নায়ক', 'গুপি গাইন বাঘা বাইন', 'অরণ্যের দিন রাত্রি', 'সীমাবদ্ধ', 'অশনি সংকেত', 'সোনার কেল্লা', 'জন অরণ্য', 'শতরঞ্জ কি খিলাড়ী', 'জয় বাবা ফেলুনাথ',' হীরক রাজার দেশে', 'ঘরে বাইরে', 'গণ শত্রু', 'শাখা প্রশাখা', 'আগন্তুক' - এর মতো চলচ্চিত্রগুলি। সত্যজিৎ রায় মোট ৩৬ টি ছবি পরিচালনা করেছেন। যার মধ্যে এর মধ্যে ২৯টি ছিল কাহিনিচিত্র, পাঁচটি তথ্যচিত্র ও দু’টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি।
শুধু চলচ্চিত্রই নয়। সাহিত্য জগতে শিশু ও কিশোরদের জন্য তিনি সৃষ্টি করে গেছেন অসংখ্য ছোটো গল্প। কল্পবিজ্ঞান নিয়ে লেখা তাঁর গল্প গুলো পাঠাক হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। তাঁর সৃষ্টি 'ফেলুদা', 'প্রফেসর শঙ্কু', 'তারিণী খুড়ো' - এর মতো চরিত্রগুলি অকুন্ঠ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
দেশে বিদেশে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন সত্যজিৎ। ১৯৯২ সালে সারাজীবনের অসামান্য কাজের জন্য ৬৪ তম একাডেমী পুরস্কার জেতেন তিনি। 'পথের পাঁচালি'র জন্য মোট ১১ টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। যার মধ্যে বিশেষ হলো কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া 'Best Human Document' পুরস্কারটি। ১৯৮৪ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের সর্বোচ্চ সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরষ্কার দেওয়া হয় তাঁকে। পেয়েছেন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান লিজিয়ন দ্য নর। ১৯৯২ সালে ১৯৯২ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন সত্যজিৎ রায়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন