বিশ্বের ২৬ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানীয় জল পান না। বিশ্বজুড়ে ৪৬ শতাংশ মানুষ জনস্বাস্থ্যর সুবিধা থেকে বঞ্চিত। রাষ্ট্রসংঘের জল বিষয়ক এক সম্মেলনে এই সংক্রান্ত এক রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। ইউএন ওয়ার্ল্ড ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২৩ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ৪৫ বছর পর এই প্রথম নিরাপদ পানীয় জলের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ডাক দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ।
এই রিপোর্টের এডিটর-ইন-চিফ, রিচারড কোন্নোর এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, যে বিরাট অংশের মানুষের কাছে পানীয় জল বা জনস্বাস্থ্যর সংস্থান নেই, ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের কাছে তা পৌঁছে দিতে বছরে ৫০০ বিলিয়ন থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হবে।
এই বিষয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার জন্য বিভিন্ন সরকার, বিনিয়োগকারী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং যে সমস্ত সংস্থা পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে তাদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন কোন্নোর। তাঁর মতে, সবাই এগিয়ে না এলে এই বিরাট সংখ্যক মানুষের কাছে নিরাপদ পানীয় জল এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়।
ওই রিপোর্ট অনুসারে, বিগত ৪০ বছর ধরে প্রতি বছর জলের ব্যবহার বেড়েছে ১ শতাংশ হারে। বর্তমান আর্থ সামাজিক উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি থেকে অনুমান করা হচ্ছে আগামী ২০৫০ সাল পর্যন্ত এই হারেই জলের ব্যবহার বাড়বে।
কোন্নোর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মধ্য আফ্রিকা, পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কিছু অঞ্চলে মরশুমভিত্তিক জল সমস্যা দেখা দেবে। বিশেষ করে যে সব অঞ্চলে জলস্তর এখনই প্রায় শূন্যে পৌঁছেছে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলে – যেখানে এখনই জলাভাব দেখা দিয়েছে সেখানে অবস্থা আরও জটিল হবে।
রাষ্ট্রসংঘের বৈজ্ঞানিক, সামাজিক এবং শিক্ষামূলক সংস্থা ইউনেস্কো সম্প্রতি এক রিপোর্টে জানিয়েছে, বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলের মানুষ, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ, তাঁরা বছরে প্রায় ১ মাস কঠিন জলাভাবে ভোগেন।
এই রিপোর্ট অনুসারে, ২০০০ সালের পরবর্তী সময় থেকে বিশ্বজুড়ে বন্যার হার বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। একইভাবে বেড়েছে খরাও। যার বেশিরভাগটাই মূলতঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটছে। এছাড়াও অপরিশ্রুত জলের কারণে ব্যাপকভাবে জলদূষণ ঘটছে। বিশ্বজুড়ে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে বর্জ্য জল শুদ্ধ করার কোনোরকম ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই পরিবেশের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু দেশের ক্ষেত্রে এই হার ৯৯ শতাংশ। যার ফলে ক্রমশ বাড়ছে জলদূষণ।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রসংঘের ডাকে এই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন ১৭১টি দেশের প্রতিনিধি সহ প্রায় ১০০ জন মন্ত্রী এবং বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া প্রায় ২০ টি সংস্থা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন