গত আগস্টে আফগানিস্তানে তালিবানিদের দখল নেওয়ার পর আগামী ৮ নভেম্বর থেকে প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী পোলিও টিকা অভিযান শুরু হবে। সোমবার ইউনিসেফ একথা ঘোষণা করেছে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ২০০১ সালে তালিবানিদের উৎখাত করার পরের বছরগুলিতে, টিকা অভিযান দেশে অনেক উন্নতি লাভ করেছিলো। যদিও, ফের তালিবানিদের দখলদারির পর আফগানিস্তানে আগামী তিন বছরের জন্য পোলিও কর্মীদের ঘরে ঘরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।
তালিবানিদের পক্ষ থেকে ঘরে ঘরে গিয়ে পোলিও টিকাকরণ অভিযানে সম্মতি মেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইউনিসেফ তালিবানিদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
জিংহুয়া নিউজ এজেন্সির বিবৃতি উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অভিযানটি আফগানিস্তানের সমস্ত শিশুদের কাছে পৌঁছাবে। যার মধ্যে ৩.৩ মিলিয়নেরও বেশি শিশু রয়েছে। এর আগে যাদের কাছে টিকা দেবার জন্য পৌঁছানো যায়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "দ্বিতীয় দেশব্যাপী পোলিও টিকা অভিযানে সম্মতি পাওয়া গেছে এবং ডিসেম্বরে পাকিস্তানের পরিকল্পিত নিজস্ব পোলিও অভিযানের সাথে এটি সমন্বয় করা হবে।"
আফগানিস্তানে ডাব্লুএইচও প্রতিনিধি ড্যাপেং লুও বলেন, "এটি সঠিক দিকে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।" তিনি আরও বলেন - "আমরা জানি যে মৌখিক পোলিও ভ্যাকসিনের একাধিক ডোজ সর্বোত্তম সুরক্ষা প্রদান করে। তাই আমরা খুবই আনন্দিত যে, এই বছর শেষের আগেই আরেকটি ক্যাম্পেইনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পোলিও নির্মূল করার জন্য সব শিশুর কাছে পৌঁছানো জরুরি। একে অবশ্যই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে”।
পোলিও টিকা পুনরায় শুরু করার পাশাপাশি, আসন্ন প্রচারাভিযানের সময় ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ভিটামিন এ এর একটি পরিপূরক ডোজও সরবরাহ করা হবে।
আফগানিস্তানে ইউনিসেফ প্রতিনিধি হার্ভে লুডোভিচ ডি লাইস বলেন, "এই সিদ্ধান্ত আমাদের পোলিও নির্মূলের প্রচেষ্টায় একটি বিশাল অগ্রগতি অর্জন করতে সহায়ক হবে।"
তিনি বলেন, "পোলিও পুরোপুরি নির্মূল করার জন্য, আফগানিস্তানের প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি শিশুকে টিকা দিতে হবে এবং আমাদের অংশীদারদের সাথে আমরা এটি করতে যাচ্ছি।" পোলিও কর্মসূচির সঠিক রূপায়ণের জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইউনিসেফের বিবৃতিতে বলা হয়, তালিবান নেতৃত্ব নারী ফ্রন্টলাইন কর্মীদের অন্তর্ভুক্তি এবং নিরাপত্তা দিতে এবং সারা দেশে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যা পোলিও টিকা অভিযান বাস্তবায়নের জন্য অপরিহার্য পূর্বশর্ত।
আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান বিশ্বের মাত্র দুটি অবশিষ্ট পোলিও মহামারীর দেশ।
নেচার রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশে পোলিও রোগের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। আনুমানিক তিন মিলিয়ন শিশু, যারা পোলিও টিকা পাবার যোগ্য, তাদের এক তৃতীয়াংশ, টিকা অভিযান থেকে বাদ পড়ে গেছিলো।
গত আগস্টে আফগানিস্তান পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে তালিবানিরা এবং এর পরেই বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের তহবিল প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে পোলিও, কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য রোগ বাড়বার ঝুঁকি বেড়েছে।
নতুন পোলিও প্রোগ্রামটি জাতিসংঘ এবং তালিবান নেতৃত্বের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার ফল। যাতে দ্রুত এবং জরুরীভাবে আফগানিস্তানের মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা মেটাতে পারে।
- with inputs from IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন