বিজ্ঞান কি আরও একটি অসাধ্য সাধন করতে পারল? ব্রেন ডেথেই তাহলে সব শেষ নয়? তারপরও প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়া সম্ভব? সম্প্রতি জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে একটি গবেষণা সম্পূর্ণ করেছেন। সেই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘অ্যানাল্স অব নিউরোলজি’-তে। সেখানেই গবেষকরা আশার কথা শুনিয়েছেন।
কিন্তু কীভাবে? মস্তিষ্কের মৃত্যুর প্রাক-মুহূর্তে বিশেষ একটি সময়ে অক্সিজেনের সরবরাহ কৃত্রিম উপায়ে যদি ফের চালু করা যায়, তাহলে এই অসম্ভবকে সম্ভব করা যেতে পারে। এমনটাই বলা হয়েছে ওই গবেষণা পত্রে।
ঠিক কোন সময়ে এই প্রক্রিয়াটি করতে হবে? গবেষকরা বলছেন, স্নায়ুকোষ মরে যাওয়ার প্রাক-মুহূর্তে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সংবহন বন্ধ হয়ে যায়। তখন সাড়া দেয় না মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক ‘সিগন্যাল’গুলিও। পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বন্ধ হয়ে যায় স্নায়ুর। নিজেকে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক বিক্রিয়ার শক্তি মেলে না। মস্তিষ্ক নিজের ভাঁড়ারে সঞ্চিত শক্তি দিয়ে নিজেকে যতটা সম্ভব সচল রাখার চেষ্টা করে। এদিকে মস্তিষ্কে শুরু হওয়া বিশেষ তরঙ্গ, যা ‘ব্রেন সুনামি’ নামে পরিচিত, তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে কর্টেক্স-সহ মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে। এটিই মস্তিষ্কমৃত্যুর প্রাক মুহূর্ত।
মানবমস্তিষ্কের মৃত্যু কিভাবে হয়, তা নিয়ে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের কৌতূহল বহুদিনের। ২০১৮ সালে প্রথম কৌতূহল নিবারণের সুযোগ পান বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল। তাঁরা ইঁদুর নিয়ে গবেষণা চালান। ইঁদুরের মস্তিষ্কে অক্সিজেন সংবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ২০- ৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক ‘সিগন্যাল’গুলি বন্ধ হয়ে যায়।
বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানীরা ন’জন মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর মস্তিষ্কেও এই প্রক্রিয়াগুলিকে ঘটতে দেখেছেন।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, মস্তিষ্কে কৃত্রিম উপায়ে ফের অক্সিজেনের সংবহন চালু করে ব্রেন ডেথ-এর প্রাথমিক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পরেও রোগীকে ফিরিয়ে আনার সম্ভব। তবে চিকিৎসকদের সেই কাজ করার জন্য প্রয়োজন আরও নিখুঁত গবেষণা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন