সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা (স্নাতক) নিট (NEET) পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কারচুপির অভিযোগে উত্তাল গোটা দেশ। দেশজুড়ে বহু পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা বেনিয়মের অভিযোগ করেছেন। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও এই বিষয়ে সরব হয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন, অর্থাৎ ৪ জুন নিটের ফল প্রকাশ হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে ৬৭ জন পরীক্ষার্থী ৭২০ নম্বরের মধ্যে ৭২০ নম্বরই অর্জন করেছে। এই বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে শিক্ষক মহল। তাঁদের দাবি, সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায় না এমনটা নয়। কিন্তু সেটা খুব কম জন পায়। ৬৭ জন পেয়ে যাবে তাও নিটের মতো পরীক্ষায় এটা অবিশ্বাস্য। যেখানে গত কয়েকবছর সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল এক অঙ্কের অর্থাৎ দশ জনেরও কম। শুধু তাই নয়, ওই ৬৭ জনের মধ্যে হরিয়ানার একটি পরীক্ষা কেন্দ্রেরই ৬ জন রয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের অনেকেই আছে যারা ৭১৮, ৭১৯ নম্বর পেয়েছে। এই নিয়ে শুধু পরীক্ষার্থীরা নয় শিক্ষকরাও অবাক হয়েছেন। তাঁদের দাবি, কোনও ভাবেই ওই নম্বর পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ১৮০টি প্রশ্ন, এবং প্রশ্নপিছু ৪ নম্বর থাকে। উত্তর সঠিক হলে ৪ নম্বর মিলবে। আর একটি ভুল হলে ৫ নম্বর কাটা যাবে। তা হলে একটি প্রশ্ন ভুল করলে প্রাপ্ত নম্বর হয় ৭১৫। সর্বভারতীয় পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন।
যদিও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (NTA)। এই সংস্থাই সর্বভারতীয় স্তরে পরীক্ষার আয়োজন করে। তারা জানিয়েছে, গতবারের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর প্রায় ৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী বেশি ছিল। সেই কারণেই পুরো নম্বর প্রাপকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ৭১৮ নম্বর পাওয়া নিয়ে এনটিএ-র বক্তব্য, ওই পরীক্ষার্থীরা গ্রেস পেয়েছেন। কিন্তু কী হিসেবে এই গ্রেস সেই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি সংস্থা।
উল্লেখ্য, এই বছর নিটের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২৪ লক্ষ। পরীক্ষা হয়েছিল দেশের ৪৭৫০টি কেন্দ্রে। গত ৫ মে পরীক্ষা হয়েছিল। প্রথম ঠিক হয়েছিল ১৪ জুন ফলপ্রকাশ হবে। কিন্তু আচমকা তা ১০ দিন এগিয়ে এনে লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের দিনই নিটের ফলপ্রকাশ হয়। যা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, লোকসভার ফলাফলের আড়ালে এই দুর্নীতির অভিযোগ যাতে চাপা পড়ে যায় তাই তড়িঘড়ি ১০ দিন আগে ফলপ্রকাশ করা হয়েছে।
অনিয়মের অভিযোগে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। এনটিএ-র কাছে ১০ দিনের মধ্যে হলফনামা চেয়েছে হাই কোর্ট।
নিটের ফলাফলে বেনিয়মের অভিযোগ উঠতেই সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, 'প্রথমে নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল। আর এখন দেখা যাচ্ছে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার ফলাফলেও কেলেঙ্কারির অভিযোগ করছে। একই কেন্দ্রের ছয় পরীক্ষার্থী ৭২০র মধ্যে ৭২০ নম্বরই পেয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অনিয়ম প্রকাশ্যে আসছে। অন্যদিকে ফলাফল প্রকাশ আসার পর দেশজুড়ে অনেক জায়গায় পরীক্ষার্থীদের আত্মহত্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক'।
তিনি আরও লেখেন, 'লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর অভিযোগ কেন খতিয়ে দেখছে না সরকার? নিট পরীক্ষায় কারচুপি হয়েছে কিনা তা জানার অধিকার ছাত্রদের রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগে তদন্ত করা কি সরকারের দায়িত্ব নয়?'
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে লেখেন, "প্রশ্ন ফাঁস, কারচুপি এবং দুর্নীতি - NEET সহ অনেক পরীক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এর সরাসরি দায় মোদী সরকারের। পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। দেশের যুব সমাজকে প্রতারণা করছে বিজেপি। আমরা চাই সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে উচ্চপর্যায়ে তদন্ত হওয়া দরকার। নিট সহ অন্যান্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী আমাদের মেধাবী পরীক্ষার্থীরা ন্যায়বিচার পাক।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন