শঙ্কা বাড়াচ্ছে দিল্লি। ঘন ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে ব্যাপকভাবে দৃশ্যমানতা কমছে রাজধানী ও রাজধানী সংলগ্ন নয়ডা, গুরগাঁওয়ে। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট জনিত বিভিন্ন দূষণভিত্তিক রোগের আক্রমণও। গত কয়েকদিনে একটানা ঘন দূষিত বাতাসের কারণে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির রোগীর সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন রাজধানীর চিকিৎসকদের। একইসঙ্গে প্রচুর রোগী চোখ থেকে লাগাতার জল পড়া, চোখ জ্বালা ও চুলকানির অভিযোগও করেছেন বলে মত চিকিৎসকদের।
গত প্রায় একসপ্তাহ ধরে দিল্লিতে ফের বাড়ছে দূষণের মাত্রা। গত ২৭ অক্টোবর থেকেই ধীরে ধীরে খারাপের দিকে এগিয়ে এবারে একেবারে মাত্রা ছাড়িয়েছে রাজধানীর বাতাসের গুণমান বা AQI (Air Quality Index)। দিল্লি-এনসিআরের বেশ কিছু অংশের AQI গত কয়েকদিন ধরে ৫০০-এর কাছাকাছি। এত বেশি AQI-এর বাতাসে খুব বেশিক্ষণ নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যথেষ্ট ক্ষতিকারক বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য স্বাস্থ্যকর বলে AQI-এর যে মাত্রা বেঁধে দিয়েছে, দিল্লির কিছু কিছু অংশের AQI বর্তমানে তার থেকে অন্ততপক্ষে কয়েক গুণ খারাপ।
এই বিষাক্ত বাতাসে ক্রমাগত থাকার ফলে সুস্থ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক হারে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি্র লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ফুসফুসের পাশাপাশি হঠাৎ করে চোখের বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিয়েছে রাজধানী ও তার সংলগ্ন এলাকায়। এই নিয়ে দিল্লি সংলগ্ন গুরগাঁওয়ের ফর্টিস হাসপাতালের ডিরেক্টর তথা চক্ষুরোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ অনিতা সেঠি জানিয়েছেন, “হাসপাতালের ওপিডিতে আমরা চোখ থেকে জল পড়ার অভিযোগ নিয়ে আসা রোগীদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি দেখতে পেয়েছি। অনেকে চোখে জ্বালা, চুলকানি ও অস্বস্তিও অনুভব করছেন।”
অন্যদিকে, প্রাইমাস সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সিনিয়র পালমোনোলজিস্ট (বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ) ডাঃ অম্বরিশ যোশী জানিয়েছেন, “অত্যন্ত খারাপ দূষণের জন্য এখন প্রায় প্রতিদিনই বেশ কয়েকজন রোগী বিভিন্ন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে আসেন। বর্তমানে হাসপাতালের ২৮টি বেডে রোগী রয়েছে। তার মধ্যে ১৪ জন রয়েছেন আইসিইউতে এবং ২ জনকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই গলায় চুলকানি ও অস্বস্তি, চোখে জ্বালা এবং ফুসফুসে অ্যালার্জির অভিযোগ নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছেন।”
চিকিৎসকদের মতে, বয়স্ক, শিশু এবং আগে থেকেই অ্যালার্জি রয়েছে এমন ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
ক্রমবর্ধমান দূষণ সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য আজ দুপুর ১২ টায় একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বৈঠকে দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই এবং সমস্ত সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকরা উপস্থিত থাকবেন। ১০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সরকারী ও বেসরকারী উভয় ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন