বেড়েই চলেছে আত্মহত্যার ঘটনা। বিশেষত, বয়স্কদের মধ্যে এই ধরণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী মানসিক অবসাদ এবং হতাশায় আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের আত্মহত্যার ঘটনায় শীর্ষে রয়েছে গ্রেটার নয়ডা। চলতি বছর গৌতম বুদ্ধ নগর জেলার নয়ডা শহরে ৩২৩ জন বয়স্ক মানুষ মানসিক অবসাদের কারণে আত্মহত্যা করেছে।
বর্তমানে গ্রেটার নয়ডার পশ্চিমের বহুতলগুলি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষদের আত্মহত্যার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গত ২৩ নভেম্বর, গ্রেটার নয়ডার পশ্চিমের চেরি কাউন্টি সোসাইটিতে মেয়ে-জামাইয়ের সাথে বসবাসকারী এক প্রবীণ মহিলা এক বহুতলের ২২ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তদন্ত মারফত জানা গেছে, গত ৭ বছর ধরে তিনি সেখানে বসবাস করতেন এবং দীর্ঘদিন মানসিক অবসাদে ভোগার কারণে এই চরম পদক্ষেপ নেন।
গত ২২ নভেম্বর, গ্রেটার নয়ডার পশ্চিমের সুপারটেক ইকোভিলেজ থ্রী হাউজিং সোসাইটির ১৬ তলা থেকে ঝাঁপ দেন ৩৫ বছর বয়সী এক মহিলা। পুলিশের দাবি, এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা। পরবর্তীকালে জানা যায়, পারিবারিক কলহের কারণে ওই মহিলা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ওই একই দিনে জয়দীপ দাস নামে এক ব্যক্তিও সুপারটেক কেপটাউন সোসাইটির আট তলা থেকে ঝাঁপ দেন।
সমীক্ষায় জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত ৩২৩টি আত্মহত্যার ঘটনার মধ্যে ৯২টি ঘটনাই ঘটেছে বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে। পুলিশের দাবি, বয়স্কদের তুলনায় কম বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। গ্রেটার নয়ডার পশ্চিমে এক সপ্তাহেরও কম সময়ে বহুতল থেকে লাফ দিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের মতে - যারা বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই কোনও না কোনও কারণে মানসিক যন্ত্রণার শিকার ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকেরই বয়স ছিল ৩০-র উর্ধ্বে, যা আরও বেশি উদ্বেগের।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অমিত কুমারের কথায় - ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার ঘটনাগুলি নিয়ে করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, Empty Nest Syndrome-র কারণে বয়স্ক মানুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। যে সব প্রবীণরা অবহেলিত, একাকী, যাদের যত্ন নেওয়া বা দেখাশোনা করার কেউ নেই তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হন। অথচ যৌথ পরিবারে বসবাসকারী বয়স্কদের মধ্যে এই ধরণের প্রবণতা দেখা যায়নি।
তিনি আরও জানান, বয়স্কদের পাড়ার প্রতিবেশীদের সাথে নিয়মিত মেলামেশা করা দরকার। এছাড়াও তাঁদের জন্য পরিবারের বাকি সদস্যদের কাজের ফাঁকে সময় বের করা উচিত। যাতে তাঁরা পারিবারিক মেলবন্ধন, ভালোবাসা অনুভব করতে পারেন।
৩০ বছরের বেশি বয়সীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে ডাঃ অমিত কুমার জানান, পারিবারিক কলহ এবং সম্পর্কের ফাটলের পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হল অতিরিক্ত কাজের চাপ। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের উচিত নিয়মিত একে অপরের সাথে কথা বলা, এই ধরণের আত্মহত্যার ঘটনা রোধ করতে অবিলম্বে একে অপরকে মানসিকভাবে সাহায্য করা অপরিহার্য।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন