৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ, যাঁর দৌলতে ORS-কে স্বীকৃতি দিয়েছিল বিশ্ব চিকিৎসার নিয়ামক সংস্থা। বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন দিলীপবাবু।
ডায়েরিয়া রোগ নিরাময়ের জন্য আমরা ওআরএস পান করি। চিকিৎসকরাই আমাদের তা প্রেসক্রাইব করেন। কিন্তু কোনওদিন জানার হয়তো চেষ্টা করিনি এই ওআরএস বা ওআরটি (Oral Rehydration Therapy)-র কীভাবে আবিষ্কার হল। চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশই চিকিৎসা জগতে ওআরটি-র প্রবেশ ঘটান। তবে তিনি যে এত মহান ব্যক্তি বেসরকারি হাসপাতালের অনেকেই জানতে পারেননি তা। তিনি আত্মপ্রচারে বিশ্বাসী ছিলেন না। তাই হয়তো তাঁর মৃত্যুর খবরটা সকলের সামনে আসেনি।
১৯৬৬ সালে দিলীপবাবু রিহাইড্রেশন থেরাপির ওপর গবেষণা শুরু করেন। কলকাতার জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মেডিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং-এ পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। সেখান থেকেই আবিষ্কার করলেন ওআরটি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থীদের কলেরা রোগ মোকাবিলায় বিরাট ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে একটি ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ শরণার্থী আশ্রয় পেয়েছিলেন। কলেরাতে আক্রান্ত হয় তাঁরা। ওআরএস প্রয়োগ করে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন তিনি। স্যালাইনের সূচের মাধ্যমে নুন-চিনি-বেকিং সোডার জল রোগীর ধমনীতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করেন তিনি। নিজের কর্মীদের ৩ হাজার মানুষের ওপর এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগের নির্দেশ দেন তিনি। তাতে দেখা যায় শুধু স্যালাইনের ফলে যেখানে মৃত্যুহার ২০-৩০ শতাংশ ছিল, সেখানে ওআরটি দেওয়ার ফলে মৃত্যু হার কমে ৩ শতাংশে নামে। তাঁর এই প্রচেষ্টার পরই স্বীকৃতি পায় ORS।
নিজের কর্মজীবনের এইসব কৃতিত্ব কখনোই তিনি সামনে আনতে চাননি। ৯০-র দশকের প্রথম দিকে তিনি WHO-র ডায়রিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণের মেডিক্যাল বোর্ডের আধিকারিক ছিলেন। পরে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চের পরিচালকরূপে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। মহান এই চিকিৎসক ২০০২ সালে শিশুরোগ গবেষণার জন্য পোলিন পুরস্কার পান। ২০০৬ সালে তিনি প্রিন্স মাহিদোল পুরস্কার লাভ করেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন