ভারতে চীনা পণ্য বয়কটের জন্য প্রচার নতুন কিছু না। অবশ্য জ্বর, সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে ক্যান্সারের ওষুধের জন্য বেজিংয়ের ওপরেই ভরসা করতে হয় আমাদের। ওষুধ তৈরির জন্য যে কাঁচামালের প্রয়োজন, তার সিংহভাগটাই (৭০ শতাংশেরও বেশি) আসে পড়শি দেশ থেকে।
কোভিডের প্রথম বছরে চীন থেকে প্রায় ১৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ওষুধ ও ওষুধ তৈরির রাসায়নিক আমদানি করা হয়েছে। কোভিডের আগের বছরের থেকে তা প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি। চিনের সঙ্গে ভারতের যতই সীমান্ত নিয়ে দ্বৈরথ থাকুক না কেন, ওষুধ বা ওষুধ তৈরির রাসায়নিক আমদানি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। উল্টে কোভিডের উপসর্গের চিকিৎসায় ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। ফলে চিন থেকে আমদানিও বেড়েছে।
কেন্দ্রের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে , ২০২০-২১ বা অতিমারির প্রথম বছরে ভারতকে প্রায় ২৮,৫২৯ কোটি টাকা মূল্যের ৩৯ হাজার কোটি টন ওষুধ বা ওষুধ তৈরির রাসায়নিক আমদানি করেছে। এরমধ্যে শুধু চিন থেকে আমদানি হয়েছে ১৯,৪০২ কোটি টাকার পণ্য।
কেন্দ্রীয় রসায়ন ও সার মন্ত্রকের বক্তব্য, ওষুধ বা ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে ভারত বিশ্বে তৃতীয় হলেও কাঁচামাল বা রাসায়নিক, কেএসএস (কি-স্টার্টিং মেটিরিয়াল) ও এপিআই (অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট) চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এমনকী প্যারাসিটামলের মতো সাধারণ ওষুধের জন্যও চীনের উপর ভরসা করতে হয়।
রসায়ন-সার মন্ত্রক জানিয়েছে, কোভিডের সময় চীন থেকে কেএসএস-এপিআই জোগানে সমস্যা দেখা দেয়। এরপর ভারতের ওষুধ শিল্পকে স্বনির্ভর করতে কেন্দ্র ওষুধ তৈরির ৪১ রকম রাসায়নিক তৈরির জন্য উৎসাহভাতা ঘোষণা করেছে। ষুধ তৈরির ড্রাগ পার্ক গড়ে তোলা হবে বলে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে চলে গেলেও বানিজ্যিক সম্পর্ক এত সহজে নষ্ট হবে না। সে সীমান্তে উত্তেজনা যে পর্যায়েই পৌঁছাক অথবা চীনা পণ্য বয়কট করার ডাক যতোই দেওয়া হোক। ভারত ওষুধ শিল্পে 'আত্মনির্ভর' নয়, বরং চীনের কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন