আপনার কি অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে? তাড়াতাড়ি ঘুম আসা, গভীর ঘুম না হওয়া বা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠায় অসুবিধা হয়? আপনার কি মনে হয় আপনি ইনসমনিয়াতে ভুগছেন? যাদের মধ্যে ঘুমের সমস্যা অর্থাৎ ইনসমনিয়ার বা অনিদ্রার লক্ষণ রয়েছে তাদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে আমেরিকার ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষার রিপোর্টে। একটি নিউরোলজি বিষয়ক জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ইনসমনিয়া ও স্ট্রোকের মধ্যে একটি প্রমাণিত যোগসূত্র রয়েছে। ৫০ বছর বয়সের নিচের ব্যক্তি, যাদের মধ্যে অনিদ্রার ৫ থেকে ৮টি লক্ষণ দেখা যায়, তাদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতা দেখা যায় লক্ষণবিহীন ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি।
রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত ৯ বছর ধরে মোট ৩১ হাজার ১২৬ জন স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে একটি সমীক্ষা করা হয় যাদের গড় বয়স ৬১ বছর। সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করা কোনও স্বেচ্ছাসেবকেরই অতীতে স্ট্রোকের কোনও ইতিহাস ছিল না। তা সত্ত্বেও ৯ বছরের দীর্ঘ সময়কালে মোট ২১০১টি স্ট্রোকের ঘটনা দেখা গিয়েছে। ৫০ বছরের নিচে বয়স, এমন ৪৫৮ জন স্বেচ্ছাসেবক যাদের মধ্যে অনিদ্রার অন্ততপক্ষে ৫ থেকে ৮টি লক্ষণ বর্তমান তাদের মধ্যে ২৭টি স্ট্রোকের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে, একইসংখ্যক লক্ষণ বিশিষ্ট ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী ৬৫৪ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ৩৩টি স্ট্রোকের ঘটনা ঘটেছে। দেখা গিয়েছে, ৫ থেকে ৮টি লক্ষণ রয়েছে এমন স্বেচ্ছাসেবক যাদের বয়স ৫০ কিংবা তার বেশি, তাদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ বেশি স্ট্রোকের প্রবণতা দেখা যায়। যদিও গবেষকরা এও জানিয়েছেন, ইনসমনিয়ার লক্ষণ থাকলেই যে স্ট্রোক হবে তার কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
আমেরিকার ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ওয়েনডেমি সাওয়াডোগো জানিয়েছেন, “এখন ঘুমের সমস্যাকে কাটানোর জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক থেরাপি রয়েছে যা আপনাকে আপনার ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করবে। সুতরাং যারা অনিদ্রার সমস্যায় ভুগছেন, তারা যদি নির্ধারণ করতে পারেন যে তাদের মধ্যে অনিদ্রার লক্ষণ রয়েছে কি না, তাহলে সেক্ষেত্রে তারা আগে থেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও থেরাপির সাহায্য নিতে পারেন। এর ফলে অনিদ্রার লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও পরবর্তীকালে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।”
সাওয়াডোগো আরও জানিয়েছেন, “উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিসের মতো যে স্বাভাবিক লক্ষণগুলি স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় সেগুলি মানুষের বয়সের সঙ্গেই শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। সেক্ষেত্রে, স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়িয়ে দেওয়া অন্যান্য অনেক লক্ষণের মতো ইনসমনিয়াও একটি সাধারণ লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। এর থেকে আমরা জানতে পারি, অল্প বয়সেই অনিদ্রার লক্ষণ দেখা দিলে বয়স বাড়ার আগেই তা চিকিৎসা ও থেরাপির সাহায্যে আয়ত্তে আনতে পারলে বয়সকালে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। ভবিষ্যতের গবেষণায় অনিদ্রার সমস্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কীভাবে স্ট্রোকের ঝুঁকি পুরোপুরিভাবে কমানো যায় তার উত্তর পাওয়া যেতে পারে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন