বেতন ও চাকরির শর্ত নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের দাবিতে এবার ধর্মঘটের রাস্তায় হাঁটলেন ব্রিটেনের জুনিয়র চিকিৎসকরা। বুধবার থেকে তাঁরা তিন দিনের ধর্মঘট শুরু করেছেন।
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) প্রায় অর্ধেকের বেশি জুনিয়র ডাক্তার বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন। শনিবার সকাল পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তাদের পরবর্তী ধর্মঘট, আগামী বছর ৩ জানুয়ারী থেকে শুরু হবে এবং ৬ দিন স্থায়ী হবে। NHS এর ডাকে এই ধর্মঘট ইতিহাসের দীর্ঘতম ধর্মঘট হিসেবে চিহ্নিত হবে বলেও সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এনএইচএস নিজেদের ওয়েবসাইটে সতর্ক করে জানিয়েছে, যদিও অন্যান্য চিকিৎসকরা এখনও কাজ করছেন, তবে এই ধর্মঘটের ফলে কর্মী হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “ধর্মঘটের দিনে, দুর্ঘটনা ও জরুরী বিভাগ এবং NHS 111 (ডিজিটাল ট্রাইজ সার্ভিস) খুব ব্যস্ত থাকতে পারে এবং এই ক’দিন স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে।”
ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-এর (বিএমএ) তথ্য অনুসারে, ২০০৮ সাল থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের বেতন এক চতুর্থাংশেরও বেশি কমানো হয়েছে। ব্রিটেনের বর্তমান জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের মধ্যে তারা ৩৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক আলোচনায়, চিকিৎসকদের ৮.৮ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশের উপরে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু BMA জানিয়েছে, এর ফলে চিকিৎসকদের গ্রেড জুড়ে বৈষম্য ছড়িয়ে পড়বে এবং এই বছরেও অনেক চিকিৎসকের বেতন কমাতে হবে।
এক্সচেকারের চ্যান্সেলর জেরেমি হান্ট এক সাক্ষাত্কারে এই ধর্মঘটকে "অবিশ্বাস্যভাবে হতাশাজনক" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল কেয়ার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া অ্যাটকিনস জানিয়েছেন “গঠনমূলক আলোচনার জন্য তাঁর দরজা সবসময় খোলা"।
এনএইচএস কনফেডারেশন এবং পেশেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সহ পাঁচটি সংস্থা এক খোলা চিঠিতে লিখে সরকার এবং বিএমএ দুই পক্ষকেই "আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার" এবং "একটি সমাধান খুঁজে বের করে তাদের বিরোধের অবসান ঘটাতে" আহ্বান জানিয়েছে।
এজ ইউকে নামক যুক্তরাজ্যের একটি দাতব্য সংস্থার ক্যারোলিন আব্রাহামস বলেছেন যে বর্তমান এবং আসন্ন ধর্মঘট, "এনএইচএস-এ বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়" চলাকালীন "বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য অনেক বেশি আশংকার হতে পারে।”
Age UK-এর মতে, ২০২৩ জুড়ে ১.২ মিলিয়নেরও বেশি অপারেশন এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করা হয়েছে এবং অপেক্ষার তালিকা জানুয়ারি থেকে ৫,১০,০০০ বেড়ে অক্টোবরে ৭.৭১ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
বেতন এবং কাজের শর্ত নিয়ে বিরোধের মধ্যে ২০২২ সালের গ্রীষ্মকালে ব্রিটেনে ব্যাপক ধর্মঘট শুরু হয়। এই ধর্মঘটের বেশিরভাগই ছিল স্বাস্থ্য, সমাজকর্মী ও শিক্ষাক্ষেত্রে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন