উত্তর থেকে দক্ষিণ রাজ্যের সর্বত্র লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। তবে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এবার ডেঙ্গুর সাথে চোখ রাঙাচ্ছে ম্যালেরিয়াও। রাজ্য সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, শেষ দু'মাসে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি।
রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, শুধুমাত্র গত ২ মাসেই রাজ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৪৪ জন। অন্যদিকে, কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৮১২ জন। সারা দেশের আক্রান্তের সংখ্যার মধ্যে তৃতীয়। এদের মধ্যে ম্যালেরিয়া ফ্যালসিপেরামে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯০২ জন, মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরীর কথায়, ডেঙ্গির প্রকোপ এখন থাকবেই। বৃষ্টি যদি আর না হয়, শীত এলে তবেই কমবে ডেঙ্গির দাপট। বর্তমানে যাঁরা আক্রান্ত, তাঁদের বেশিরভাগই হলেন কমবয়সি ও মহিলা। ডেঙ্গির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। একই সাথে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, চলতি বছরের এপ্রিলে রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩৯। বর্তমানে সারা রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫ হাজার। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৬২ জনের। যেসব জেলাগুলিতে ব্যাপক হারে ডেঙ্গির দাপট বেড়েছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা।
গত এক সপ্তাহে কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছে ৭৪৫ জন। দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগণার ব্যারাকপুর। ব্যারাকপুর পুরসভায় এক সপ্তাহে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৫৩৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে হুগলীর শ্রীরামপুর। গত এক সপ্তাহে সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪০ জন।
কলকাতা পুলিশের এএসআই উৎপল নস্কর সহ গত ২ দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে আরও ৪ জনের। গত শুক্রবার, কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় এক স্কুল ছাত্রীর। মৃতের নাম আরবিনা খাতুন। প্রথম শ্রেণীর পড়ুয়া আরবিনা উত্তর ২৪ পরগণার বাদুরিয়ার কলিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা।
আরবিনার মৃত্যুতে যশাইকাটি আটঘরা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুটছে এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, সারা গ্রামের বেশিরভাগ ঘরেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নির্বিকার, নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে পঞ্চায়েত সদস্যরা।
অন্য দুই মৃতের মধ্যে একজন হলেন উত্তর ২৪ পরগণার মছলন্দপুরের বাসিন্দা প্রতিমা মণ্ডল (২৪)। অপরজন হলেন জগদ্দলের বাসিন্দা দীনবন্ধু ঘোষ। একই চিত্র ফুটে উঠেছে উত্তরবঙ্গেও। সূত্রের খবর অনুযায়ী, গত ৩ মাসের মধ্যে শিলিগুড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন