ভারতে ৩৫ বছরের কম বয়সী মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে - স্থূলতা, অনিয়মিত জীবনযাপন এবং দীর্ঘক্ষণ সময় বসে থাকা ইত্যাদি কারণের জন্য বাড়ছে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা। ক্যান্সারের মত মারণ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতিবছর অক্টোবর মাসে একটি প্রচারমূলক অভিযান করেন দেশের চিকিৎসকরা। তারই একটি অংশ হিসেবে রয়েছে স্তন ক্যান্সারের বিষয়।
ব্যাঙ্গালোরের ফোর্টিস গ্রুপ অফ হসপিটালের মেডিকেল অনকোলজি এবং হেমাটো-অনকোলজি বিভাগের ডিরেক্টর ড: নীতি রাইজাদা সংবাদসংস্থা IANS-কে জানান, গ্লোবোক্যান ২০২০-র তথ্য অনুসারে, গ্লোবোক্যান ২০২০ থেকে ভারতে প্রতি বছর গড়ে মোট ১.৭৮ লক্ষ মহিলা স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা করান। নীতির কথায়, "পশ্চিমের দেশগুলিতে ৫৫ উর্ধ্ব মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি, যেখানে আমাদের দেশে ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুবতীরা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।"
কেয়ার হসপিটালস গ্রুপের সিনিয়র কনসালটেন্ট, সার্জিক্যাল অনকোলজি এবং ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন ডাঃ বিপিন গোয়েল ব্যাখ্যা করেছেন, জিনগত কারণে নারীরা অনেক কম বয়সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এছাড়াও, স্তন ক্যান্সারের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব এবং ভুল ডায়েট।
তিনি আরও বলেন, "তরুণ মেয়েদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। দশ বছর আগেও ৩৫ বছর বয়সী ১০০ জন মহিলার মধ্যে মাত্র ৩ জনকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে আমরা দেখেছি। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে ৮-১০ দাঁড়িয়েছে।"
কয়েক বছর আগে, ভারতে মহিলারা সার্ভিকাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হতেন বেশি। মূলত দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি এবং মানবদেহে প্যাপিলোমা ভাইরাস প্রবেশের কারণেই এই রোগটি হয়। তবে, বর্তমানে এই ক্যান্সারের প্রকোপ কমলেও, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
ডাঃ গোয়েলের মতে, ক্যান্সারের প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ বংশগত এবং অ-বংশগত উভয়ই হতে পারে। বিশ্বে প্রায় ১০-২০ শতাংশ স্তন ক্যান্সারের ঘটনা বংশগত কারণেই হয়। কারণ, মানবদেহে BRCA1 এবং BRCA2 জিনের উপস্থিতি রয়েছে।
তাঁর কথায়, কোনও মহিলার স্তন ক্যান্সার হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন রকম স্ক্রিনিং এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ম্যামোগ্রাম হল স্তনে গলদ নির্ণয়ের সবচেয়ে সহজ পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটি। ৪০ বছর বয়সের পর মহিলাদের বছরে একবার স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ক্যান্সারের প্রথম ধাপ ধরা পড়লে, বেঁচে থাকার এবং রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা থাকে প্রায় ৯৫ শতাংশ।
একইভাবে মনিপাল হাসপাতালের মেডিকেল অংকোলজি বিভাগের এইচওডি এবং কনসালটেন্ট ডাঃ অমিত রাউথানের কথায়, অল্প বয়স্ক (৩৫-র কম) মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। কারণ, বাহ্যিক (চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি) এবং অভ্যন্তরীণ (গৃহস্থালীর কাজ) উভয় ক্ষেত্রেই তাঁরা কাজের মধ্যে সমানভাবে ব্যস্ত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন