রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে লাগাম ছাড়া বিল মেটাতে নাজেহাল অবস্থা মধ্যবিত্তদের। এই নিয়ে নবান্নের পক্ষ থেকে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার খরচ বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও ১৩ মাস কেটে গেলেও সেটা মানা হয়নি। বরং প্রতিনিয়ত সামনে আসছে বেসরকারি হাসপাতালে বিলের অসঙ্গতি। যার ফলে আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সরকারি হাসপাতালের বেহাল পরিকাঠামোয় মানুষ আস্থা রাখতে না পেরে যাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেও আকাশছোঁয়া বিল মেটাতে নাজেহাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। উদাহরণস্বরূপ, মার্চ মাসে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে পেটের যন্ত্রণায় ভর্তি হয়েছিলেন ফৈয়াজ হোসেন নামক এক ব্যক্তি। কোনো অপারেশন ছাড়াই গত আটদিনে বিল হয়েছিল ৫ লক্ষ টাকা। টাকা মেটাতে চড়া সুদে লোন নিতে বাধ্য হয় ফৈয়াজ। এরপর স্বাস্থ্য কমিশনের হস্তক্ষেপে সেই লোন মকুব হয়। গোটা ঘটনার পুলিশি তদন্তেরও নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য কমিশন।
বেসরকারি হাসপাতালে বেলাগাম বিল নিয়ে বহু অভিযোগ গত ৩-৪ বছর ধরে স্বাস্থ্য কমিশনে জমা পড়েছে। এই সমস্যার সমাধানে গত বছর ২ মার্চ মাসে রাজ্য সরকার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিতে ইনডোর এবং আউটডোরে চিকিৎসার খরচ এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার খরচ বেঁধে দিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গঠন করেছিল। এই কমিটি রাজ্যে প্রায় ৪ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে খরচের ঊর্ধ্বসীমা নির্দিষ্ট করতে কাজ করবে।
এই মর্মে হাইকোর্টেও জনস্বার্থে মামলা দায়ের হয়। কিন্তু ১৩ মাস কেটে গেলেও রাজ্য সরকারের সেই সিদ্ধান্তের কোনো ফল দেখা যায়নি। বরং আরও বেড়ে চলেছে বেসরকারি হাসপাতালের বিলে অসঙ্গতি।
অন্যদিকে, এই নিয়ে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা দায়ের হয়। মামলাকারীদের পক্ষে আদালতে জানানো হয়, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা খরচের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হবে তা ১৪ বছরের পুরানো একটি আইনে বলা আছে। কিন্তু সেই আইন মানা হচ্ছে না।
এবিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার আছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার। কেন্দ্রীয় সরকার এই দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, সরকার যদি নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পের হার অনুযায়ী পরিষেবা চালু করে দেওয়া হবে।
এবিষয়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের বৃহৎ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস-এর বক্তব্য, সরকারি ক্ষেত্রের চিকিৎসা সহ অন্যান্য পরিকাঠমো যদি ঠিক থাকত, তাহলে চতুর্দিকে এত বেসরকারি চিকিৎসা ক্ষেত্র গড়ে উঠত না। সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা না করে চিকিৎসা ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থে বিভিন্ন এলাকায় নার্সিংহোম, হাসপাতাল খুলে দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া স্বাস্থ্যসাথি থেকে বাদ হয়ে যাচ্ছে হার্নিয়া থেকে হাইড্রোসিল সহ বেশ কয়েকটি অপারেশন। অন্যদিকে, চিকিৎসকদের বক্তব্য, স্বাস্থ্যবিমার জন্য সরকার যা খরচ করে তা আসে সাধারণ মানুষদের টাকা থেকে। এই সরকারি খরচের একটা বড় অংশ যায় বেসরকারি হাসপাতালকে টাকা দেওয়ার জন্য।
২০২২-২০২৩ –এর ন্যাশনাল হেলথ অথরিটি রিপোর্ট অনুযায়ী, কেন্দ্র সরকারের আয়ুষ্মান ভারত বিমা প্রকল্পের মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে টাকা খরচ করেছে, তার প্রায় ৬৬ শতাংশ গিয়েছে বেসরকারি ক্ষেত্রে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন