HIV চিকিৎসায় ‘ডলুটেগ্রাভির’-কে ‘অলৌকিক ওষুধ’ বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। ২০২০ সালে এই ওষুধ ভারতে আসার পর চিকিৎসায় আশার আলো দেখেন HIV আক্রান্তরা। তবে সেই ওষুধের সঙ্কট দেখা দিয়েছে ভারতে। ফলে, মহাবিপদে পড়েছেন রোগীরা।
সংবাদ মাধ্যম ‘Scroll.in’ জানিয়েছে, ‘দেশব্যাপী ডলুটেগ্রাভির যোগানের অভাবে সমস্যায় পড়েছেন রোগীরা (HIV আক্রান্তেরা )। ২০২০ সালে নিতিন সোলাঙ্কি (নাম পরিবর্তিত) নামে এক ব্যক্তি ডলুটেগ্রাভির গ্রহণ করা শুরু করেন। এই ওষুধের উপকারও পান তিনি। কিন্তু, গত দু’মাসে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ‘ডলুটেগ্রাভির’-এর একটি ট্যাবলেটও না পাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে তাঁর শরীরে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের থানের এক অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল (antiretroviral) কেন্দ্রে গিয়েছিলেন সোলাঙ্কি। কিন্তু, স্টকে ‘ডলুটেগ্রাভির’ না থাকায়, খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়েছে তাঁকে।’
নিতিন সোলাঙ্কি জানান, ‘ওষুধ পাওয়ার জন্য অফিসারদের সঙ্গে আমাকে লড়াই করতে হচ্ছে।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘HIV পরীক্ষার জন্য সরকারিভাবে প্রচার চালানো হয়। চিকিৎসার প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়। কিন্তু, কোথায় গেল সেই প্রতিশ্রুতি?’
সাধারণত এই চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে ওষুধ সরবরাহ করে থাকে ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (NACO)। এ জন্য অর্থ প্রদান করে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার।
সংবাদ মাধ্যম ‘The Hindu’ জানিয়েছে, প্রায় একই অবস্থা তামিলনাড়ুতে। এই রাজ্যের অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল (antiretroviral) কেন্দ্রে টেনোফোভির ডিসোপ্রক্সিল (Tenofovir Disoproxil), লামিভুডিন (Lamivudine), ডলুটেগ্রাভির (Dolutegravir), অ্যাবাকাভির (Abacavir) এবং লোপিনাভি (Lopinavir) ওষুধের অভাব রয়েছে।
সূত্রের খবর, অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (ART) সেন্টারগুলি ১ থেকে ৩ মাসের পরিবর্তে ১৫ ওষুধ বিতরণ করছে। ‘জাতীয় নির্দেশিকা অনুসারে, প্রতিটি ART কেন্দ্রে তিন মাসের জন্য প্রয়োজনীয় স্টক বজায় রাখা আবশ্যক। কিন্তু, সেখানে অ্যাবাকাভির ও লোপিনাভি ওষুধের ঘাটতি রয়েছে।’
সম্প্রতি, একজন বয়স্ক মহিলা যিনি বেশ কয়েক বছর ধরে এআরটি-তে ছিলেন বলেছিলেন যে চেন্নাইয়ের একটি এআরটি কেন্দ্র শুধুমাত্র এক সপ্তাহের জন্য ওষুধ বিতরণ করেছে এবং তাকে পুনরায় ফিল করার জন্য ফিরে যেতে বলেছে। “যখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন তারা এত অল্প সময়ের জন্য ওষুধ দিচ্ছে, তারা আমাকে বলেছিল যে কোনও স্টক নেই। পরের বার, আমার রিফিল আবার এক সপ্তাহের জন্য এবং পরে ১৫ দিনের জন্য ছিল। আমার একটি কাজ আছে, এবং রিফিল করার জন্য ঘন ঘন ভিজিট করা কঠিন,” সে বলল।
মণিপুরেও HIV-র ওষুধের সরবরাহ কমেছে। ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (NACO)-এর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ সংগ্রহ এবং ৬ মাসের স্টক করতে পারছে না স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি (SACS)। যার জেরে এই রাজ্যের প্রায় ১৩ হাজার HIV/AIDS রোগী সমস্যায় পড়েছেন।
এই সঙ্কট নিয়ে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্বচ্ছাসেবী সংগঠন - মণিপুর নেটওয়ার্ক ফর পজিটিভ পিপল (MNP+), কেয়ার ফাউন্ডেশন, সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেস সার্ভিস অর্গানাইজেশন এবং কৃপা সোসাইটির প্রতিনিধিরা। MNP+এর সভাপতি এল দীপক জানান, ‘এই পরিস্থিতি বর্তমানে রাজ্যের প্রায় ১৩ হাজারের বেশি HIV/AIDS রোগীকে সমস্যায় ফেলেছে। রোগীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকার কথা, তা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
ইম্ফলে থেকে কেয়ার ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জোতিন থাংজাম জানিয়েছেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি অবিলম্বে পদক্ষেপ না নেয়, বা রোগীদের আবেদনে সাড়া না দেয়- তাহলে ১৩ হাজারের বেশি মানুষের জীবন বিপন্ন হবে।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন