কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে গঙ্গাসাগর মেলা কী পশ্চিমবঙ্গে সুপার স্প্রেডারের ভূমিকা পালন করতে চলেছে? বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এবার সেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে চিকিৎসক মহলে। গোটা রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কলকাতায় সংক্রমণ বেড়েছে ছয় হাজারের বেশি। রাজ্যের সংক্রমণের হার সাড়ে ৪৪ শতাংশ। রাজনধানী দিল্লিতে সংক্রমিত হয়েছেন ১৫,০০০-এর কিছু বেশি। সংক্রমণের হার প্রায় ১৫ শতাংশ। মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্রে সংক্রমণের হার প্রায় ৩০ শতাংশ।
সেই তুলনায় কর্নাটক, কেরল এবং তামিলনাড়ুর অবস্থা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নবান্নের ‘কোভিড-প্রশাসন’ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, সংক্রমণের এই ভয়াবহতা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার মেলা করতে চায়। আদালতকে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল যা বলেছেন, সেই কথাতেই তা স্পষ্ট।
এই পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্ট শুক্রবার জানিয়েছে, শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলা হবে। আদালত তিন সদস্যের নজরদারি কমিটি গড়ে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও চিকিৎসক-সহ বিভিন্ন মহলের আশঙ্কা, গত বছর হরিদ্বারের কুম্ভমেলার মতোই সাগরমেলাও ‘সুপারস্প্রেডার’ হয়ে উঠতে চলেছে কিনা!
করোনা পরিস্থিতির জন্য বড়দিন ও বর্ষবরণ বাতিল করে দিল্লি ও মহারাষ্ট্র। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ করেনি। সেই থেকেই নবান্নের ভূমিকা সমালোচিত হচ্ছে। এমন কথাও অনেকে বলছেন যে, এটা ভোট-ব্যাঙ্ক রাজনীতির মাশুল! গোয়ায় সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তাই বড়দিনের উৎসব বাতিল করেনি রাজ্য সরকার। এদিকে উত্তরপ্রদেশের ভোটের কথা ভেবে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়ে আসা হয়। কারণ, গঙ্গাসাগর মেলায় বড় সংখ্যার মানুষ সেখান থেকে আসেন।
সংক্রমণের হারের নিরিখে কলকাতার কাছাকাছি আছে মুম্বই ও দিল্লি। মুম্বইয়ে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। দিল্লি কলকাতার ঠিক পরেই। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে, দিল্লি ও মুম্বইয়ে প্রচুর আন্তর্জাতিক যাতায়াত আছে। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে কলকাতায় আন্তর্জাতিক উড়ানের সংখ্যা সবচেয়ে কম। দিল্লি-মুম্বই-গুজরাত-তামিলনাড়ু-কর্নাটক-কেরল যে ভাবে আন্তর্জাতিক উড়ানের যাতায়াত হয়, পশ্চিমবঙ্গ তার ধারেকাছেও নেই। ওই রাজ্যগুলিরও কোভিড-প্রশাসন যথেষ্ট নীচুমানের। কিন্তু তবুও পশ্চিমবঙ্গের মতো বিপর্যয় হয়নি।
চিকিৎসক তথা ‘ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক কৌশিক চাকির কথায়, ‘এটা ভোট-ব্যাঙ্কের রাজনীতি! রাষ্ট্রশক্তির সঙ্গে ধর্ম যুক্ত হলে বিজ্ঞানের কোনও জায়গা থাকে না। প্রশাসন দূরত্ববিধি মানতে বলছে। আর সাগরে ৫ লক্ষ লোক স্নান করতে পারেন বলছে। পার্ক স্ট্রিটে ৫ লক্ষ লোক হয়নি। তাতেই কী অবস্থা।'
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার আদালতে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেছিলেন, নোনাজলে করোনা ছড়ায় না। সেই প্রসঙ্গে কৌশিক বলেন, ‘তা হলে তো আমাদের সকলকে দীঘা-মন্দারমণি নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখা উচিত! ফ্রান্সেই এমন সংক্রমণ কেন!’
বর্ষীয়ান চিকিৎসক কুণাল সরকার সরাসরিই বলেছেন, ‘আমরা ভোট-ব্যাঙ্কের দিকে তাকাচ্ছি। লাইফ ব্যাঙ্কের দিকে নয়। ভোটের দিকে তাকাচ্ছি। ভোটারের দিকে নয়। আমাদের কোনও মূল্য নেই।’ কুণালের কথায়, ‘শাসক সংবেদনশীল না হলে আমাদেরই ভুগতে হবে। ঢেউ আসতই।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন