ভারতে ৫০ বছরের কম বয়সী প্রায় ৭৫ শতাংশ জনসংখ্যা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। হৃদযন্ত্রের জটিলতা এমনভাবে বাড়ছে যা ভারত কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না। বিশ্ব হার্ট দিবসে চিকিৎসকরা একথা জানিয়েছেন।
দেশজুড়ে চিকিৎসকদের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, ৪০ বছরের কম বয়সী ভারতীয়দের মধ্যে অন্তত ২৫ শতাংশ হার্ট অ্যাটাক বা অন্য কোনো গুরুতর হার্ট-সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং এই ঝুঁকি ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে জনসংখ্যার ৫০ শতাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চিকিৎসকরা দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করেন যে ভারতকে অবশ্যই যুবক এবং মধ্যবয়সীদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাওয়া এবং সক্রিয় জীবনযাপনকে উৎসাহিত করতে হবে। অপেক্ষাকৃত তরুণ জনসংখ্যার মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঊর্ধ্বগতি আটকাতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। দৈনন্দিন জীবনে চাপের মাত্রা বৃদ্ধি এবং অনুপযুক্ত জীবনধারা হৃদরোগ সংক্রান্ত অসুস্থতা বৃদ্ধির দুটি প্রধান কারণ।
গ্লেনিয়েলস গ্লোবাল হাসপাতালের প্রধান ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট এম সাই সুধাকর বলেন - "অনেক সামাজিক প্যারামিটারে ভারতের রেটিং দুর্বল, এবং এটি একটি প্রধান কারণ যে প্রতি বছর আরও বেশি সংখ্যক মানুষ আরও বেশি চাপের মধ্যে পড়ছেন। ব্যক্তিগত সমস্যার সাথে সামাজিক সমস্যা বেড়ে চলায় মানসিক চাপের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা সরাসরি হার্টের ওপর প্রভাব ফেলছে। যদিও বেশিরভাগ পুরুষ এই সমস্যার শিকার বলে মনে করা হয়, কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে তা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং আমাদের দেশে মহিলাদের মধ্যে মৃত্যুর হারও বেশি।
ভি হরিরাম, সিনিয়র ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, এসএলজি হাসপাতাল জানিয়েছেন যে, ভারতীয়রা ট্রান্স ফ্যাটের অভ্যাসযুক্ত ভোক্তা এবং এর সাথে দুর্বল জীবনধারা, অনিয়মিত কাজের সময়, মদ্যপান, ধূমপান, তামাক সেবন, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং এই ধরনের ব্যক্তিদের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। তিনি আরও জানিয়েছেন, "হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে হতে পারে। যা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, সম্ভাব্য হৃদরোগের কোন প্রাথমিক লক্ষণ বুঝতে পেরে উপেক্ষা করা উচিত নয়। সময়মত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট রাজীব গর্গ বিশ্বাস করেন যে, কিছু সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ সম্ভবত তরুণ ভারতীয়দের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, "নিয়মিত হাঁটা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস হল সবচেয়ে সহজ পথ। প্রত্যেক ব্যক্তির শারীরিক গঠন আলাদা এবং মানসিক চাপ নেবার আলাদা ক্ষমতা আছে। কিন্তু সঠিক জীবনযাত্রা বজায় রাখা এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা হল ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী।
চিকিৎসকরা দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করেন যে, মানুষ শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, অত্যধিক ঘাম, মাথা ঘোরা ইত্যাদি প্রাথমিক সতর্কতামূলক লক্ষণ যেন উপেক্ষা না করেন। এবং সময়মত চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, ভারী চেহারার মানুষ এবং যাঁদের আগে থেকেই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু জটিলতা আছে তাঁরা ধূমপান ছেড়ে দিন এবং অ্যালকোহল খাওয়া বন্ধ করুন (যদি তাদের এই দুটি অভ্যাস থাকে)। এছাড়াও ৩০ বছরের বেশি বয়সী তরুণদের কার্ডিওভাসকুলার রোগের পারিবারিক ইতিহাস নিয়মিতভাবে চেকআপ করানো উচিত।
- with inputs from IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন