সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনীতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে দলবদল। ভোটের আগে বা পরে এই দলবদল দেখতেই ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন দেশের মানুষ। দলবদল করে সরকার বদল করে দেওয়ার একাধিক ঘটনাও বিগত কয়েক বছরে একাধিক রাজ্যে ঘটেছে। এবার তেলেঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনেও দেখা গেল দলবদলুদেরই রমরমা।
তথ্য অনুসারে, তেলেঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের মনোনয়নে যে ৬৪ জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন তার মধ্যে ২০ জনই বিগত পাঁচ মাসে বিজেপি অথবা বিআরএস ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এমনকি বেশ কয়েকজন নির্বাচিত বিধায়ক মনোনয়ন পেশ করার চূড়ান্ত সময়সীমার মাত্র কয়েকদিন আগেই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনের ৪৫দিন আগেই গত আগস্ট মাসে নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছিল বিআরএস। যেখানে প্রায় সব বিধায়ককেই মনোনয়ন দেওয়া হলেও বহু মনোনয়ন প্রত্যাশী মনোনয়ন পাননি। সময় নষ্ট না করে সেইসব বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কংগ্রেস।
রাজ্যের প্রাক্তন সাংসদ পঙ্গুলেতি শ্রীনিবাস রাও, প্রাক্তন মন্ত্রী জুপাল্লি কৃষ্ণা রাও, তুম্মালা নাগেশ্বর রাও, প্রাক্তন সাংসদ জি বিবেক, কে রাজাগোপাল রেড্ডিদের মত প্রভাবশালীরা দ্রুত বিআরএস অথবা বিজেপি থেকে কংগ্রেস যোগ দেন।
তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস যে ১১৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তার মধ্যে ৩০ জনই ছিলেন অন্য দল থেকে নির্বাচনের মুখে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া প্রার্থী। যার মধ্যে এবারের নির্বাচনে ১০ জন পরাজিত হলেও জয়ী হয়েছেন ২০ জন।
নাগেশ্বর রাও, যিনি প্রথম বিআরএস সরকারে একজন মন্ত্রী ছিলেন এবার মনোনয়ন না পেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে কংগ্রেসে যোগ দেন। প্রাক্তন এই টিডিপি নেতা, যিনি অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশেও মন্ত্রী ছিলেন এবারের নির্বাচনে খাম্মামে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী পি. অজয় কুমারকে ৪৯,০০০ ভোটে পরাজিত করেছেন।
অবিভক্ত মাহাবুবনগর জেলায় প্রাক্তন মন্ত্রী জুপল্লী কৃষ্ণ রাও, যিনি বিআরএস থেকে বরখাস্ত হওয়ার পরে জুলাই মাসে কংগ্রেসে যোগ দেন, কোল্লাপুর কেন্দ্র থেকে তিনি এবারের নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। অন্য যারা বিআরএস থেকে নির্বাচনের আগে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে মনোনয়ন পেয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন টি. মেঘা রেড্ডি (ওয়ানাপার্টি)। যিনি কৃষিমন্ত্রী এস. নিরঞ্জন রেড্ডিকে পরাজিত করেছেন।
প্রাক্তন বিধায়ক ওয়াই শ্রীনিবাস রেড্ডি, যিনি বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন, তিনি মাহাবুবনগর থেকে আবগারি মন্ত্রী ভি. শ্রীনিবাস গৌড়কে পরাজিত করেছেন৷
ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার কয়েকদিন আগে যারা বিআরএস থেকে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন বি. মনোহর রেড্ডি (তান্দুর), ভেমুলা বীরেশম (নক্রেকাল), এম. সামেল (টুঙ্গাথুরথি)৷
ছেলেকে মেডক কেন্দ্রে বিআরএস মনোনয়ন না দেওয়ায় মলকাজগিরির বিআরএস-এর বিধায়ক ময়নামপল্লী হনুমন্ত রাও কংগ্রেসে দেন। কংগ্রেস দু’জনকেই প্রার্থী করে। যদিও হনুমন্ত রাও মালকাজগিরি থেকে পরাজিত হলেও তাঁর ছেলে মেদক থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রাক্তন সাংসদ জি বিবেক, যিনি একেবারে শেষ মুহূর্তে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি চেন্নুর আসনে জয়ী হয়েছেন। কে. রাজাগোপাল রেড্ডি, যিনি গত বছর মুনুগোদে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন, এবার শেষ মুহূর্তে তিনি কংগ্রেসে ফিরে আসেন এবং মনোনয়ন পান। তিনিও এবার চেন্নুর আসন থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন। প্রাক্তন টিডিপি নেতা রেভুরি প্রকাশ রেড্ডি, যিনি নির্বাচনের আগে বিজেপি ছেড়েছিলেন, তিনিও কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে পারকাল আসন থেকে জয়লাভ করেছেন। যদিও বিজেপির আরেক নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী এ. চন্দ্রশেখর, যিনি নির্বাচনের আগে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন তিনি জহিরাবাদ কেন্দ্র থেকে পরাজিত হয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন