পাঞ্জাব নির্বাচনের ঠিক আগে, কারাগারে বন্দী স্বঘোষিত গডম্যান এবং ডেরা সাচা সৌদা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিং-কে ২১ দিনের জন্য বিশেষ ছুটি দিলো বিজেপি নেতৃত্বাধীন হরিয়ানা সরকার। উল্লেখ্য, তিনি তাঁর দুই শিষ্যকে ধর্ষণের জন্য ২০ বছরের সাজা ভোগ করছেন। জানানো হয়েছে রাম রহিম সিং-কে গুরুগ্রামে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে। কড়া নিরাপত্তায় তাকে গুরুগ্রামে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তিনি ২০১৭ সাল থেকে হরিয়ানার সুনারিয়া জেলে বন্দি রয়েছেন। পাঞ্জাবে তার বিপুল সংখ্যক অনুসারী রয়েছে। প্রসঙ্গত, পাঞ্জাবে ভোট আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি। এর আগে, অসুস্থ মায়ের সাথে দেখা করার আবেদন সহ বিভিন্ন কারণে তাঁকে তিনবার জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
হরিয়ানার জেলমন্ত্রী রঞ্জিত চৌতালা সাংবাদিকদের বলেছেন, "জেল ম্যানুয়াল অনুযায়ী রাম রহিমকে প্যারোল দেওয়া হয়েছিল। জেলের বন্দিকে প্যারোল বা বিশেষ ছুটি দেওয়ার সঙ্গে রাজ্য সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই।" "এটি একজন আসামির আইনগত অধিকার, যিনি তিন বছর সাজা পূর্ণ করার পরে প্যারোল বা ফার্লো চাওয়ার যোগ্য হন।"
রাম রহিম সিং-এর ফার্লোতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে, গুরুদ্বার পরিচালনাকারী শিরোমনি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি (এসজিপিসি)-র পক্ষ থেকে হরিয়ানা সরকারকে জেল থেকে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী অপরাধীকে মুক্তি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে আবেদন করা হয়।
এর আগে, রাম রহিমকে তার স্ত্রী হারজিত কৌরের আবেদনে প্যারোল মঞ্জুর করা হয়েছিল। সেই সময় জানানো হয়েছিলো তাঁর মা নসিব কৌর, ৮৫, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। রাম রহিম (৫২) বর্তমানে রাজ্যের রাজধানী চণ্ডীগড় থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে রোহতকের উচ্চ-নিরাপত্তাযুক্ত সুনারিয়া কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
২০১৯ সালের জুনে, রাম রহিম সিং তার প্যারোলের আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ওইসময় রাজ্যের বিজেপি সরকার স্বঘোষিত গডম্যানের পক্ষে মত দেওয়ায় বিরোধী দলগুলির কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছিলো। ওই সময় তিনি সিরসায় তাঁর সম্প্রদায়ের সদর দফতরের কৃষিকাজ দেখভাল করার জন্য ৪২ দিনের প্যারোল চেয়েছিলেন।
এছাড়াও, হাইকোর্ট তার পালক কন্যার বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য তার প্যারোলের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল। রাম রহিমকে ২০১৭ সালের আগস্টে দুই মহিলাকে ধর্ষণের জন্য ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
জানুয়ারি ২০১৯ সালে পাঁচকুলার এক বিশেষ সিবিআই আদালত ১৬16 বছরেরও বেশি সময় আগে সাংবাদিক রাম চন্দর ছত্রপতিকে হত্যার জন্য রাম রহিম এবং অন্য তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
২৫ আগস্ট, ২০১৭তে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর পাঁচকুলা এবং সিরসায় হিংসার ঘটনায় ৪১ জন নিহত এবং ২৬০ জনেরও বেশি আহত হয়।
রাম রহিম তাঁর অনুসারীদের ভোট প্রভাবিত করার ক্ষমতার কারণে প্রায় দুই দশক ধরে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার রাজনৈতিক নেতা এবং দলগুলির পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এবং পরবর্তী হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে, ডেরা সাচা সৌদা, পাঞ্জাবের বিশিষ্ট সম্প্রদায়ের সাথে ভাটিন্ডার সালাবতপুরায় জনসাধারণকে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য এক বিশেষ আবেদন জারি করেছিলেন।
২০১৭ সালের পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে, এই সম্প্রদায় দাবি করে যে, সারা ভারতে তাদের ৬০ মিলিয়ন অনুসারী রয়েছে। যার মধ্যে শুধু পাঞ্জাবেই অনুগামীর সংখ্যা ৪ মিলিয়ন। ওই সময় বাবা রাম রহিম শিরোমনি অকালি দল-বিজেপি জোটকে সমর্থন করলেও বিজেপি জোট কংগ্রেসের কাছে পরাস্ত হয়। যদিও, ২০১২ এবং ২০০৭ সালের পূর্ববর্তী পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে রাম রহিম কংগ্রেসকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
পাঞ্জাব জুড়ে এদের ৮৪টি ক্যাম্পাস সহ 'সৎসঙ্গ ঘর' আছে। ডেরা সাচা সৌদা সম্প্রদায় বলে যে এটা কোনো ধর্ম নয় বরং একটি মানবিক সংগঠন।
ডেরা সাচ্চা সৌদার অনুগামীরা, যদি তারা এই নির্দেশ মেনে চলে, তবে রাজ্যের ৩৫ থেকে ৪০টি আসনে তাদের প্রভাব আছে। যে আসনগুলি পাঞ্জাবের বৃহত্তম রাজনৈতিক অঞ্চল মালওয়াতে। যেখানে রাজ্যের মোট ১১৭ আসনের মধ্যে ৬৯টি আসন রয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন