আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর কেন্দ্রে চতুর্মুখী লড়াই হতে চলেছে। কারণ বিজপি-তৃণমূলের পাশাপাশি প্রার্থী দিয়েছে বাম এবং কংগ্রেসও। রাজ্যের অন্যান্য বেশ কয়েকটি আসনের মতো এই আসনে জোট হয়নি বাম-কংগ্রেসের। ফলে ভোট কাটাকুটির খেলায় কোন দল সবথেকে বেশি লাভবান হবে সেদিকেই নজর সকলের। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বিজেপি প্রার্থীকেই এগিয়ে রাখছেন।
পশ্চিমবঙ্গের অধিক আলোচিত লোকসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে মেদিনীপুর অন্যতম। যার অন্যতম কারণ দিলীপ ঘোষ। ২০১৯ সালে এই কেন্দ্র থেকে জিতে নজির গড়েছিলেন তিনি। কিন্তু দল এবার তাঁকে মেদিনীপুরে টিকিট দেয়নি। তাঁর বদলে এখানে প্রার্থী করা হয়েছে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে। এবং দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী করা হয়েছে বর্ধমান-দূর্গাপুর কেন্দ্রে।
অগ্নিমিত্রার বিপক্ষে তৃণমূল টিকিট দিয়েছে দলের বিধায়ক তথা অভিনেত্রী জুন মালিয়াকে। মূলত এই কেন্দ্রের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতেই জুনকে প্রার্থী করেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। মেদিনীপুর কেন্দ্রে বামেদের প্রার্থী বিল্পব ভট্ট (সিপিআই) এবং কংগ্রেসের তরফ থেকে দাঁড়িয়েছেন শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়।
২০১৯ সালে মেদিনীপুর থেকে ৮৮ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন দিলীপ ঘোষ। নিজের কেন্দ্রে প্রায় সমস্ত গ্রামে গ্রামেই তিনি ঘুরেছেন দলের সংগঠন মজবুত করার জন্য। যার সুবিধা পাবেন অগ্নিমিত্রা পাল। মেদিনীপুরের বদলে দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী করা হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে। নিজের পুরনো কেন্দ্র নিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, 'কোনো ফাউল না করলে বিজেপিই জিতবে মেদিনীপুরে'।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বাম এবং কংগ্রেস উভয়েই প্রার্থী দিলেও মূল লড়াই হবে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে। তবে জুন মালিয়ার থেকেও কয়েকটি কারণের জন্য এগিয়ে আছেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল।
প্রথমত, ২০১৯ সালে বিজেপির বিশাল ব্যবধানে জয়। দ্বিতীয়ত, দিলীপ ঘোষের সাংগঠনিক দক্ষতা এবং তৃতীয়ত তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের ভোট যদি ভাগাভাগি হয় তার সরাসরি লাভ পাবে বিজেপি।
অন্যদিকে জুন মালিয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা রয়েছে জেতার। যার কারণ বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট না হওয়া (মেদিনীপুর কেন্দ্রের নিরিখে)। বিজেপির দিকে চলে যাওয়া বাম-ভোট যদি বামেদের দিকে ফিরে আসে এবং কংগ্রেসও যদি ভোট কাটতে পারে তাহলে জয়ের পথ সহজ হবে জুনের কাছে।
মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রটি ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিপিআই-র দখলে ছিল। এই কেন্দ্র থেকেই নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত নারায়ণ চৌবে এবং প্রয়াত ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের মতো প্রার্থীরা। ২০০৯ সালে যখন একের পর এক কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে যাচ্ছে তখন সিপিআই-র প্রবোধ পান্ডা মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রের সমীকরণ বদলে যায়। তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। ২০১৯ সালে মেদিনীপুর থেকে জয়ী হন দিলীপ ঘোষ।
প্রায় ১৫ লক্ষ ভোটার থাকা মেদিনীপুরের বেশিরভাগ মানুষই কৃষি নির্ভর। গ্রামের সাধারণ মানুষের মন যে দলের প্রার্থী জয় করতে পারবেন তিনিই শেষ হাসি হাসবেন। তবে ভুলে গেলে চলবে না কৃষি জমি বেশি থাকার পাশাপাশি এই কেন্দ্রেই রয়েছে আইআইটি খড়গপুরের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আছে ভারতীয় বায়ুসেনার কলাইকুন্ডলা এয়ারবেস। বেকারত্বও এখানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু।
-With IANS Inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন