২০২২ বিধানসভা নির্বাচনে গুজরাটে বিজেপি’র বিপুল জয়লাভ এবং কংগ্রেসের শক্তি হ্রাসের পিছনে বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম হল- গুজরাটের সংখ্যালঘু,দলিত, আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্কের উপর আম আদমি পার্টি (AAP) ও আসাদউদ্দিন ওয়াসির মিম (AIMIM) পার্টির প্রভাব বৃদ্ধি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, ২০০২ সালের গোধরা কাণ্ডের দু’দশক পরেও হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক নিজেদের দখলে রেখেছে গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে, KHAM (ক্ষত্রিয়, হরিজন, আদিবাসী এবং মুসলিম) ভোট ব্যাঙ্কের উপর যে দখল ছিল কংগ্রেসের, তার উপর থাবা বসিয়েছে AAP এবং AIMIM। আর, ভোট শেয়ারের দিক থেকে কংগ্রেসের শক্তি কমায় অতিরিক্ত সুবিধা পেয়েছে মোদী-অমিত শাহের দল (BJP)।
১৮২ আসনের গুজরাটে একটিও মুসলিম প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। তবে, কংগ্রেসের টিকিটে ৬ জন মুসলিম, AAP-র টিকিটে ৩ জন সংখ্যালঘু এবং AIMIM-র টিকিটে ১২ জন মুসলিম প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর ফলে, ক্ষত্রিয়, হরিজন, আদিবাসী এবং মুসলিমদের ভোট একাধিক দলে ভাগ হয়েছে। একইসঙ্গে, রাজ্যের বিভিন্ন আসনে প্রধান বিরোধী দলের (কংগ্রেসের) ভোটের ব্যবধান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।
জানা যাচ্ছে, গুজরাটে ১ টি আসনেও জিততে পারেনি AIMIM। মাত্র ৫ টি আসনে জিতেছে AAP। তবে, কংগ্রেসের চিরাচরিত ভোট ব্যাঙ্কে এই দুই দলের ভোট দখল; ক্ষমতাসীন বিজেপিকে জিততে সাহায্য করেছে।
কংগ্রেসের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দারিয়াপুর আসন। এই আসনে বিজেপির কৌশিক জৈনের কাছে মাত্র ৫,২৪৩ টি ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন বর্তমান কংগ্রেস বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন শেখ। গিয়াসউদ্দিন পেয়েছেন ৫৫,৮৪৭ টি ভোট। নিকটতম বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বী কৌশিক পেয়েছেন ৬১,০৯০ টি ভোট। যেখানে, AAP পেয়েছে ৪১৬৪ টি ভোট এবং AIMIM পেয়েছে ১৭৭১ টি ভোট।
বাপুনগর আসনে- BJP-র দীনেশসিংহ কুশওয়াহার কাছে ১২,০৭০ টি ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন বর্তমান কংগ্রেস বিধায়ক হিম্মতসিংহ প্যাটেল। অন্যদিকে, এই কেন্দ্রে AAP-র দখলে গিয়েছে ৬,৩৮৪ টি ভোট, আর সমাজবাদী পার্টি (SP) পেয়েছে ৩,৬৭১ টি ভোট।
মঙ্গরোল আসনে - BJP-র করগাটিয়া লাখাভাইয়ের কাছে ২২,৫০১ হেরেছেন দুইবারের কংগ্রেস বিধায়ক বাবুভাই ভাজা। এই আসনে AAP পেয়েছে ৩৪,৩১৪ টি ভোট, এবং AIMIM পেয়েছে ১০,৭৮৯ টি ভোট।
অন্যদিকে, জামালপুর-খাদিয়াত আসনে জিতেছেন কংগ্রেসের ইমরান খেদাওয়ালা। এই আসনে টানা তিন বার জয়লাভ করলেও, এবার প্রাপ্ত ভোটের মার্জিন কমে এসেছে। ২০১৭ সালে তিনি পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ভোট, এবার তা নেমে এসেছে ৫৮,৪৮৭ ভোটে। আবার, এই কেন্দ্রে AIMIM-র রাজ্য সভাপতি সাবির কাবলিওয়ালা পেয়েছেন ১৫,৬৭৭ টি ভোট।
আবার, গোধরা আসনে BJP-র সি কে রাউলজি তাঁর কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বী রশ্মিতাবেন চৌহানকে ৩৫,১৯৮ ভোটে পরাজিত করেছেন। রাউলজি পেয়েছেন ৯৬,২২৩ টি ভোট, আর চৌহান পেয়েছেন ৬১,০২৫ টি ভোট। যেখানে ২০১৭ সালে এই কেন্দ্রে বিজেপির জয়ের ব্যবধান ছিল মাত্র ৩৫৮ ভোট।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন