মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাই নির্বাচন কমিশনের কোপে পড়েছেন তিনি। তাঁর প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কমিশন। আর কমিশনের সেই নির্দেশে ক্ষুব্ধ প্রাক্তন বিচারপতি। কমিশনের নির্দেশে তাঁর মানহানি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। প্রয়োজনে আদালতের যাওয়ার কথাও জানান তিনি।
এক সংবাদ মাধ্যমে প্রাক্তন বিচারপতি জানান, কমিশনের কাছে এই নিষেধাজ্ঞার পুনর্বিবাচনার আর্জি জানাবেন তিনি। প্রাক্তন বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি কমিশনকে জবাব দিতে গিয়ে বলেছিলাম, যদি কোনও পদক্ষেপ করা হয়, তার আগে যেন অতিরিক্ত জবাব (সাপ্লিমেন্টরি রিপ্লাই) দেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু কোনও সুযোগ না দিয়েই কমিশন এই নির্দেশ দিয়েছে।’’
অভিজিৎ আরও বলেন, ‘‘অন্য লোকের মান আছে, রেখা পাত্রের মান নেই, আমার মান নেই, তা তো হতে পারে না!’’ একই সঙ্গে বলেন, ‘‘দরকারে কমিশনের এই নির্দেশ খারিজ করার আর্জি জানিয়ে আমি আদালতে যাব।’’
অন্যদিকে, অভিজিতের বিরুদ্ধে কমিশনের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। শুভেন্দু জানিয়েছেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জি মহিষাদলে এসে কী সব বলে গিয়েছেন। তখন কি নির্বাচন কমিশন ঘুমোচ্ছিল? বাপ-বেটা, গদ্দার— কত কী বলেছেন। ওঁদের জন্য এক নিয়ম আর অভিজিৎ গাঙ্গুলির জন্য আলাদা নিয়ম?’’
উল্লেখ্য, প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে কমিশনে অভিজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তৃণমূল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৭ মে অভিজিতকে শোকজ করে কমিশন। কমিশন জানায়, ২০ তারিখের মধ্যে যদি তিনি জবাব না দেন, তাহলে কমিশন এক তরফা পদক্ষেও করবে। সেই মতো ২০ তারিখ অভিজিৎ কমিশনকে জবাব দেয় বলে জানা যায়। সেই জবাব কমিশন খতিয়ে দেখেছে বলে জানা গেছে।
কমিশন সূত্রে খবর, সেই জবাব পড়েও কমিশনের মনে হয়েছে ‘কুরুচিকর ভাবে ব্যক্তি আক্রমণ’ করেছেন অভিজিৎ। আর তা করে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন তিনি। পাশাপাশি, কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতীয় সংবিধানে মেয়েদের বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়। সে কারণে, এক জন মহিলার সম্মানরক্ষার জন্য সব সময় সচেষ্ট রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
কমিশনের মনে হয়েছে, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছেন, তা ‘ভারতে এক মহিলার মর্যাদার ক্ষয়সাধন’ করছে। বিজেপি প্রার্থীর মন্তব্যকে ‘নিন্দনীয়’ বলেও জানিয়েছে কমিশন। এছাড়া অভিজিতের মতো একজন ব্যক্তির এমন মন্তব্য অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে মনে করছে কমিশন। সেকারণেই কমিশনের এই পদক্ষেপ।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির নির্বাচনী প্রচার সভার একটি ভিডিও ভাইরাল হয় (যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি পিপলস রিপোর্টার)। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বিজেপি প্রার্থীকে বলতে শোনা যায়, “তৃণমূল বলছে রেখা পাত্রকে কেনা হয়েছিল ২০০০ টাকার বিনিময়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুমি কত টাকায় বিক্রি হও? তোমার হাতে কেউ ৮ লক্ষ টাকা গুঁজে দিলে তার চাকরী হয়। কেউ ১০ লক্ষ টাকা দিলে তার রেশন হয়। কেন তোমার দাম ১০ লক্ষ টাকা? তুমি কেয়া শেঠকে দিয়ে মুখে মেকাপ করাও বলে? আর রেখা পাত্র গরিব মানুষ, লোকের বাড়ি কাজ করে, আমাদের প্রার্থী। সে জন্য তাঁকে ২০০০ টাকায় কেনা হয়? একজন মহিলা হয়ে একজন মহিলা সম্পর্কে তিনি একথা বলেন কি করে? উনি আদৌ মহিলা কিনা, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন
