গণতন্ত্র সংবিধান ও খেটে খাওয়া মানুষ কে বাঁচাতে, বামপন্থীদের হাতকে শক্তিশালী করুন। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির সভায় একথা বলেন সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। জলপাইগুড়ি ডিভিসি রোডের মাদ্রাসা ময়দানে জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট মনোনীত কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থী দেবরাজ বর্মনের সমর্থনে বামফ্রন্ট ও জাতীয় কংগ্রেসের ডাকে এক নির্বাচনী জনসভায় একথা বলেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক।
এদিন জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশের উদ্দেশ্যে মিছিল আসে। মিছিলে পথ হাঁটেন লোকসভা ক্ষেত্রের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত চা শ্রমিক ক্ষেতমজুর কৃষক সহ সমস্ত অংশের মানুষ।
সভায় বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থী দেবরাজ বর্মন বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার ভারতের গণতন্ত্রকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক কাঠামোকে ভেঙে দেশের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে। কর্পোরেটদের হাতে দেশের সম্পদ তুলে দিতে চাইছে। দুই সরকার হাতে হাত মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চাইছে।
সভায় সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম তার বক্তব্যে বলেন, সারা দেশে বামপন্থী দলসমূহ জাতীয় কংগ্রেস ও অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ দল একজোট হয়ে লড়াই করছে। এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টা আসনে বামফ্রন্ট ও জাতীয় কংগ্রেস একত্রিত হয়ে লড়াই করছে।
সেলিম বলেন, অনেকে প্রশ্ন রাখছেন বামফ্রন্ট ও জাতীয় কংগ্রেস একসাথে কেন? আসলে যারা দেশকে ভালোবাসে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বিজেপি আরএসএস এর বিরুদ্ধে। অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন তাই সাধারণ নির্বাচন নয়, এটা অসাধারণ নির্বাচন। কারণ কেন্দ্রে যে ধর্মান্ধশক্তি ক্ষমতায় আছে তারা যদি ক্ষমতায় পুনর্বহাল হয় তাহলে এই ভোটই হবে শেষ ভোট।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার সময় জাতীয় কংগ্রেস ও বামপন্থীরা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল সে লড়াইয়ে তৎকালীন জনসংঘের-এর কোন ভূমিকা ছিল না। আজ আরএসএস বিজেপি বলছে কংগ্রেস মুক্ত ভারত, আর এ রাজ্যের ক্ষেত্রে টিএমসি বলছে বিরোধীশূন্য পশ্চিমবঙ্গ। দুজনের কথা একই। সাবান কিনলে যেমন দোকানে বলে শ্যাম্পু ফ্রি তৃণমূলকে ভোট দিলে বিজেপি ফ্রি। বিজেপি যেরকম বলে সত্তর বছরে কিছু হয়নি ঠিক একই ভাবে এ রাজ্যের তৃণমূল বলে ৩৪ বছর কিছু হয়নি।
সেলিম বলেন, মানুষ বিচার করবেন ৭০ বছরে কিছু হয়েছে কী হয়নি? ৩৪ বছরে কিছু হয়েছে বা হয়নি? বাম জমানায় প্রতিবছর স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে শুরু করে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে নিয়োগ হত। এখন পুলিশেও নিয়োগ বন্ধ। সিভিক ভলেন্টিয়ার দিয়ে পুলিশ চলছে। তাদের দিয়ে সমস্ত অপকর্ম করাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন।তারা টাকা তুলছে আর কালীঘাটে সেই টাকা পৌঁছচ্ছে।
ইডি-সিবিআই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভোট আসলেই ইডি সিবিআই এর ছোটাছুটি বেড়ে যায়। দিনের শেষে এরা কিছুই করতে পারে না। কবে কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর এরা দিল্লি পাঠালো, দিল্লি থেকে আর রিপোর্ট আর আসে না, কারণ তৃণমূল বিজেপির মধ্যে সেটিং আছে। পুলিশ পুলিশ লড়াই করে তৃণমূল বিজেপির নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে রেখেছে। রাজ্যের বুকে ইডি সিবিআই আরে রাজ্য পুলিশের টম এন্ড জেরির মতন টানাটানির খেলা চলছে।
সাধারণ মানুষকে সাবধান করে এদিন সিপিআইএম নেতা বলেন, তৃণমূল বিজেপি দুই দলই মানুষকে ভাগ করতে চায়। বাংলা নদীমাতৃক দেশ। এখানে সারি গান জারি গান কীর্তন বাউল সবকিছু সকলে শুনতে ভালোবাসে। হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ধর্ম নিয়ে হানাহানি কোনদিন এ রাজ্যে ছিল না। ধর্ম আর রাজনীতিকে এক করে দিতে চাইছে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল। কারণ রুটি-রুটির সংগ্রাম কে ভুলিয়ে দিতে পারলে মোদি আর দিদির সুবিধে হয়।
জলপাইগুড়ি নেতাজি পাড়া মোড় থেকে এদিন সমাবেশের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া মিছিলে পা মেলান এই কেন্দ্রের বামফ্রন্ট মনোনীত কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থী দেবরাজ বর্মন, মহম্মদ সেলিম, সিপিআইএম জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সম্পাদক সলিল আচার্য, আর এস পি নেতা অশোক ঘোষ সহ বাম ও জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ।
মাদ্রাসা ময়দানে কৃষক, শ্রমিক, খেত মজুর, সুমিত কর্মচারী শিক্ষক মধ্যবিত্ত সহ অগণিত মানুষের ভিড়ে ঠাসা সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সলিল আচার্য।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন