ভোটমুখী কর্ণাটকে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি। তাই, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরিয়াপ্পার (B.S. Yediyurappa) ক্ষোভ প্রমোশনের চেষ্টা করছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। কারণ, কর্ণাটকের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর লিঙ্গায়েত গোষ্ঠীর সমর্থন এখনও তাঁর দিকে রয়েছে।
বাসবরাজ বোম্মাইকে মুখ্যমন্ত্রী করার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ইয়েদুরিয়াপ্পা। সরকারি থেকে দলীয় কর্মসূচী - সবক্ষেত্রেই তিনি অবজ্ঞার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু, মাস পেরোলেই কর্ণাটকে বিধানসভা নির্বাচন। এই মুহূর্তে দলের পক্ষে ইয়েদুরিয়াপ্পার সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিজেপি। তাই, তাঁকে কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ডের সদস্য করে তাঁর ক্ষোভ নিরসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি।
জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি খোলাখুলিভাবে ইয়েদুরিয়াপ্পার প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।
একইসঙ্গে, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করার কারণে বিজেপির প্রতি লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের যে ক্ষোভ আছে, তা ভুলে যাওয়ার আবেদন করেছে অমিত শাহের দল।
সূত্রের খবর, রাজ্যে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা সম্পন্ন কোনও জননেতা এখনও তৈরি করতে পারেনি বিজেপি। তাঁরা এখন বুঝতে পারছে, ইয়েদুরাপ্পার থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার ফলে বিজেপির প্রতি বেজায় ক্ষুব্ধ লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়।
এ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন উত্তর কর্ণাটকের কুষ্টাগীর প্রবীণ কংগ্রেস বিধায়ক অমরেগৌড়া পাতিল। সংবাদ সংস্থা আইএএনএস (IANS)-কে তিনি বলেন, ‘এই পর্যায়ে বিজেপির পক্ষে হারানো জায়গা পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব। বিজেপি ইয়েদুরাপ্পাকে শেষ করেছে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে পদত্যাগ করেছেন। একজন বিধায়ক হিসাবে আমি বলতে পারি, তাঁর মতো অন্য কোনও বিজেপি নেতার সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার করা হয়নি।’
পাটিল বলেন, ‘ইয়েদুরাপ্পাকে আবার বিজেপি মুখ হিসেবে তুলে আনতে চাইলেও বিজেপিকে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের ভোট দেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। তারা কীভাবে ভোট দিতে পারে? তাকে কাঁদতে কাঁদতে পদত্যাগ কর বাধ্য করা হয়েছিল। তা নিয়ে মানুষ এখনও ক্ষুব্ধ।’
দুর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও ৮০ বছর বয়সী ইয়েদুরিয়াপ্পা এখনও লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের প্রশ্নাতীত নেতা। রাজ্য বিধানসভায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন বিধায়ক নির্বাচিত হন লিঙ্গায়েত সম্প্রদায় থেকে।
বিগত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি কংগ্রেস জেডিএস জোটের কাছে পরাজিত হলেও পরবর্তী সময়ে 'অপারেশান লোটাস'-এর মাধ্যমে বিজেপিকে ফের ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও বড়ো ভূমিকা পালন করেছিলেন বর্ষীয়ান এই বিজেপি নেতা।
রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ হলেন লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের। সারা রাজ্যেই লিঙ্গায়েতদের উপস্থিতি রয়েছে। তবে, উত্তর কর্ণাটক অঞ্চলে এই সম্প্রদায়ের প্রভাব সবথেকে বেশি। এছাড়া, দক্ষিণ কর্ণাটকের একাধিক জেলাতেও নির্ধারক ভূমিকা পালন করে এই সম্প্রদায়।
যদিও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ইয়েদুরিয়াপ্পার সঙ্গে দলের দূরত্বের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। একাধিক বিজেপি বিধায়কের বক্তব্য, বিরোধীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ইয়েদুরিয়াপ্পা এবং লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিজেপির বিরোধের কথা প্রচারের চেষ্টা করছে। যা আদৌ সত্যি নয়।
- with IANS inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন