গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা করেও মহারাষ্ট্রের ৬ আসন নিয়ে বিবাদ মিটলো না বিজেপি এবং শিবসেনার। যে ৬ আসন নিয়ে বিবাদ তার মধ্যে আছে থানে, পালঘর, রত্নগিরি সিন্ধুদুর্গ, নাসিক, ধারাশিব এবং শম্ভাজীনগর।
সূত্র অনুসারে এই ৬ আসন নিয়ে ৩ বার বৈঠকে বসেছে মুখ্যমন্ত্রী ও শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ধে এবং উপমুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও রফাসূত্র পাওয়া যায়নি। দুই পক্ষই এই ৬ আসনের দাবিদার। একনাথ এবং দেবেন্দ্রর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর অনুসারে একমাত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হস্তক্ষেপ করলেই এই বিবাদ মিটতে পারে।
যে ৬ আসন নিয়ে বিবাদ তার মধ্যে শম্ভাজীনগরের বিদায়ী সাংসদ মিম-এর। থানে, রত্নগিরি সিন্ধুদুর্গ এবং ধারাশিব (পূর্বতন ওসমানাবাদ) কেন্দ্র শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠীর দখলে এবং পালঘর ও নাসিক শিবসেনা একনাথ সিন্ধে গোষ্ঠীর দখলে।
এই ৬ আসনের মধ্যে ধারাশিব ছাড়া বাকি ৫ আসনেই দাবি জানিয়েছে বিজেপি। যদিও শিবসেনা এই ৬ আসনের কোনটিই ছাড়তে রাজি নয়। দুই পক্ষই দাবি করছে এই আসনগুলিতে তাদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ধে কোনোভাবেই থানে আসন ছাড়তে রাজী নন। কারণ এই আসন তাঁর কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই। তাঁর নিজের বাড়িও এই কেন্দ্রের অন্তর্গত। অন্যদিকে বিজেপির দাবি এই কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠীর প্রার্থী রাজন বিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে প্রভাবশালী প্রার্থী দরকার। যা শিবসেনা সিন্ধে গোষ্ঠীর হাতে নেই।
রত্নাগিরি-সিন্ধুদুর্গ কেন্দ্র নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে নিজের মন্ত্রীসভা থেকেই চাপের মধ্যে রয়েছেন। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী উদয় সামন্ত এবং তার ভাই কিরণ সামন্তর সমর্থকরা এই কেন্দ্র বিজেপিকে ছেড়ে দেবার পরিবর্তে দলীয় মনোনীত প্রার্থী দেবার বিষয়ে চাপ দিচ্ছেন। যদিও বিজেপি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নারায়ণ রানেকে এই কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দিতে আগ্রহী এবং নির্বাচনে শিবসেনা ইউবিটি-র কাছ থেকে এই আসনটি ছিনিয়ে নেওয়ার আশা করছে। পালঘরেও, বিজেপি দলীয় প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে এবং আরএসএস এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত সংগঠনগুলির প্রভাবের কারণে আসনটি জিততে আত্মবিশ্বাসী। পালঘরে হিতেন্দ্র ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন বহুজন বিকাশ আঘাদি থেকে সমর্থন পাওয়ার আশা করছে বিজেপি।
একইভাবে, সম্ভাজিনগরে, যা সম্প্রতি ঔরঙ্গাবাদ নামে পরিচিত ছিল, শিবসেনা শিন্ধে গোষ্ঠী দলের মন্ত্রী সন্দীপন ভামরে বা মারাঠা সংরক্ষণ কর্মী বিনোদ পাতিলের নাম মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করেছে। যদিও বিজেপি সম্ভাজিনগর আসনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভাগবত কারাদকে মনোনয়ন দিতে ইচ্ছুক। বিজেপি মনে করছে শিবসেনা শিন্ধে ও শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠীর ভাঙনের সুবিধা নিয়ে এই কেন্দ্র থেকে তাদের জয় সহজ হবে। এই কেন্দ্রে শিবসেনা ইউবিটি প্রাক্তন সাংসদ চন্দ্রকান্ত খায়েরকে মনোনয়ন দিয়েছে।
বিবাদ শুরু হয়েছে নাসিক আসন নিয়েও। যে আসনে রাজ্য সরকারের আরেক অংশীদার অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি দাবি জানিয়েছে। যা আসন ভাগাভাগি প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। এনসিপি-র মন্ত্রী এবং সমতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ছগন ভুজবল দাবি করেছেন যে তিনি ওই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাঁর দাবি অনুসারে, বিজেপির বিশিষ্ট নেতারা তাঁর মনোনয়নের পক্ষে সওয়াল করেছেন। এই কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ হেমন্ত গডসে ইতিমধ্যে আসন ভাগাভাগি চুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা না করেই তার প্রচার শুরু করেছেন। যদিও ছগন ভুজবল এখনও তার দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।
ভুজবল স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি নাসিক আসনে দলের ঘড়ি প্রতীকে লড়বেন, বিজেপির পদ্মফুল প্রতীকে নয়। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের মতে ছগন ভুজবলের প্রস্তাব বাস্তবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ এই কেন্দ্রে তিনজন বিজেপি বিধায়ক আছে এবং নাসিক পৌর কর্পোরেশন এবং পার্শ্ববর্তী ত্রিম্বকেশ্বর নাগরিক সংস্থার ৭০ জনেরও বেশি প্রাক্তন পুরপিতার সমর্থন আছে।
বিতর্ক আছে ধারাশিব কেন্দ্র নিয়েও। এই কেন্দ্রে শিবসেনা ইউবিটি ইতিমধ্যেই বর্তমান সাংসদ ওমরাজে নিম্বালকারকে মনোনীত করেছে এবং তিনি ভোটারদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে প্রচার শুরু করেছেন। বিজেপি দলীয় বিধায়ক এবং প্রাক্তন মন্ত্রী রানা পাতিলকে এই কেন্দ্রে মনোনয়ন দিতে ইচ্ছুক। অন্যদিকে শিন্ধে গোষ্ঠী ওমরাজে নিম্বালকরের বিরুদ্ধে লড়াই উপযুক্ত প্রার্থী না হলে লড়া কঠিন বলে মনে করছে। অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বে এনসিপি ধারাশিব আসন পাওয়ার আশা করছে এবং ইতিমধ্যেই দলীয় বিধায়ক সতীশ চ্যবন, বিক্রম কালে এবং জেলা আধিকারিক-কর্তা সুরেশ বিরাজদার সহ তিনটি নাম বাছাই করে রেখেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন