দেশে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হয়ে গেছে। ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোটগ্রহণের পর পরবর্তী, অর্থাৎ দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ ২৬ এপ্রিল। এদিনই ভোট নেওয়া হবে দেশের ৮৬টি আসনে। যার মধ্যে আছে কেরালার ২০টি আসন। যেখানে উত্তর কেরালার কান্নুর লোকসভা কেন্দ্র এখন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।
এবার কান্নুর কেন্দ্রে মূল লড়াই রাজ্যে ক্ষমতাসীন এলডিএফ মনোনীত সিপিআইএম প্রার্থীর সঙ্গে কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থীর। বিগত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে এই কেন্দ্রের ৪ আসনে জয়লাভ করেছিল বামপন্থীরা। দুটি আসনে কংগ্রেস এবং ১টি আসনে কংগ্রেস সেকুলার। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন কংগ্রেসের কে সুধাকরণ (৫০.৭৪%)। তিনি সিপিআইএম প্রার্থী পি কে শ্রীমতীকে (৪১.৬৮%) ৯৪,৫৫৯ ভোটে পরাজিত করেছিলেন। বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৬.৫৬ শতাংশ। যদিও এবার এই আসনে জয়লাভের বিষয়ে আশাবাদী সিপিআইএম।
কান্নুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭টি কেন্দ্রে মুসলিম ও খ্রীস্টান সংখ্যালঘু জনসংখ্যার হার ৩৯ শতাংশ। রাজ্যের বিরোধী ইউডিএফ-এর সঙ্গী ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের এই অঞ্চলে ভালো প্রভাব আছে। যে প্রভাবের কারণেই ২০১৯-এর নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী জয়লাভ করে। এছাড়াও এই অঞ্চলের ইরিক্কুর, পেরাভুর অঞ্চল খ্রিস্টান অধ্যুষিত। যাদের বড়ো অংশই দীর্ঘদিনের কংগ্রেস সমর্থক।
এবারেও এই আসন নিজেদের দখলে রাখার উদ্দেশ্যে কংগ্রেস মনোনয়ন দিয়েছে বিদায়ী সাংসদ ৭৫ বছর বয়সী কে সুধাকরণকে। যিনি বর্তমানে কেরালা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। যদিও এবার এই আসনে সুধাকরণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাননি। যদিও তাঁর বিকল্প, প্রভাবশালী কোনও প্রার্থী না পাওয়ায় তাঁকেই এবারও মনোনয়ন দিয়েছে কংগ্রেস। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে সুধাকরণ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, আমি আমার জয়ের বিষয়ে চিন্তিত নই। আমি আমার জয়ের ব্যবধান কতটা বাড়ানো যায় তা নিয়ে ভাবছি।
সুধাকরণের বিরুদ্ধে একাধিকবার বিজেপি ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠেছে। এই অঞ্চলে সিপিআইএম এবং বিজেপির লড়াইতে একাধিকবার তিনি বিজেপির পক্ষ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যও করেছেন। তাঁর স্পষ্ট কথা, কেরালায় কংগ্রেসের মূল শত্রু বামেরা। তাঁর মতে, কেরালায় বিজেপির কোনও শক্তি নেই। এবারের নির্বাচনেও কংগ্রেসের আক্রমণের মূল লক্ষ্য কেরালার শাসকদলের প্রধান নেতা ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
কান্নুর আসনে জয়ের লক্ষ্যে এবার সিপিআইএম এই কেন্দ্রে মনোনয়ন দিয়েছে এম ভি জয়রাজনকে। যিনি দলের কান্নুর জেলা সম্পাদকও। এখনও পর্যন্ত কান্নুরের যেখানে যেখানে তিনি নির্বাচনী প্রচারে গেছেন সেখানেই তিনি উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন। এবার তাঁর প্রচার যুবদের ভীড়ও চোখে পড়ার মত।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে সিপিআইএম নেতা জয়রাজন জানিয়েছেন, কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারে বলার মত কোনও কথা নেই। তাই তারা নির্বাচনী প্রচারে বাম প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে মানহানিকর মন্তব্য করছে।
তিনি আরও বলেন, এবার কান্নুর আসন জয় করতে বদ্ধপরিকর এলডিএফ। কংগ্রেস খোলাখুলিভাবে বিজেপিকে সমর্থন করছে। তারা মূল ইস্যু নিয়ে কোনও কথাই বলছে না। হেরে যাবার ভয় থেকে বাম প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে অপমানজনক মন্তব্য করছে।
এই কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কংগ্রেস থেকে দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সি রঘুনাথ। তাঁর দাবি, কান্নুর কেন্দ্রের নতুন ভোটারদের ৩৫ শতাংশ বিজেপির সঙ্গে আছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এই আসন জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। কংগ্রেস এবং সিপিআইএম রাজ্যের মানুষকে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) নিয়ে ভুল বোঝাচ্ছে। বহু মুসলিম মানুষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং আমাকে সমর্থন করবেন বলে জানিয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন