বীরভূমের একসময়ের ‘গুড় বাতাসা’ দাওয়াই দেবার ত্রাস তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা অনুব্রত মণ্ডল আপাতত ভোটের ময়দান থেকে অনুপস্থিত। অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের বীরভূম জেলার বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে জমাটি লড়াই হতে চলেছে। ত্রিমুখী এই লড়াইয়ের আছে তৃণমূল, সিপিআইএম এবং বিজেপি। যে আসন ধরে রাখাটাই এখন তৃণমূলের সামনে বড়ো চ্যালেঞ্জ।
গোরু চোরাচালান মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে বর্তমানে অনুব্রত মণ্ডল নয়াদিল্লির তিহার জেলে আটক আছেন। যেহেতু জেলায় ভোটের সমস্ত কিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকতো তাই এবার তার অনুপস্থিতি ভোটের দিন ক্ষমতাসীন দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৮৫ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত একটানা এই বোলপুর কেন্দ্র থেকে সাংসদ ছিলেন সিপিআইএম-এর সোমনাথ চ্যাটার্জি। যিনি ইউপিএ-১ সরকারের সময় লোকসভার স্পিকারও ছিলেন। ১৯৭১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত, বোলপুর কেন্দ্রে সিপিআই(এম) প্রার্থীরা টানা ১২ বার জয়লাভ করেছেন।
২০০৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে ব্যাপক হাওয়া থাকলেও সিপিআই(এম) প্রার্থী ডঃ রামচন্দ্র ডোম প্রায় ১ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৭১ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে একটানা সাংসদ ছিলেন সিপিআইএম-এর শরদীশ রায়। ১৯৮৫তে তাঁর মৃত্যুর পর এই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী হন সোমনাথ চ্যাটার্জি।
তৃণমূল কংগ্রেস বোলপুর থেকে তার বর্তমান সাংসদ অসিত কুমার মালকে পুনরায় মনোনয়ন দিয়েছে। ২০১৯ সালে তিনি ১ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। যদিও ২০১৯-এর ব্যবধান এবং ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রের অধীন ৭টি বিধানসভার ফলাফল তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষে কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও এবারের নির্বাচনে অনুব্রত মণ্ডলের না থাকা বড়ো ফ্যাক্টর সেকথা মেনে নিচ্ছেন অতি বড়ো তৃণমূল সমর্থকও।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য অনুসারে, এই পরিস্থিতিতে, বিজেপি প্রার্থী প্রিয়া সাহা, অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিকে বোলপুরে প্রথমবার পদ্ম ফোটাতে পারবেন বলে আশা করছেন।
২০১৪ সালে বিজেপির কামিনী মোহন সরকার এই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মোট ভোটের মাত্র ৮.৬৪ শতাংশ পেয়েছিলেন এবং তৃতীয় স্থানে ছিলেন। ২০১৯ সালে, এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী রাম প্রসাদ দাস ২৫.৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসেন।
এই দুই প্রার্থী ছাড়াও এবারের ভোটের ময়দানে রয়েছেন বীরভূম জেলা থেকে CPI(M)-এর লড়াকু নেত্রী শ্যামলী প্রধান৷ পূর্বতন বামফ্রন্ট শাসনকালে বোলপুর যখন লাল ঘাঁটি ছিল সেইসময় তিনি দক্ষতার সঙ্গে জেলার পঞ্চায়েত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পরিচালনা করেছেন। এছাড়াও ২০১৬ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে সন্ত্রাস কবলিত নানুর কেন্দ্র থেকে তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অনুপম হাজরা এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হলে সমীকরণ বদলে যায়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন এবং তৃণমূল কংগ্রেস সেই আসন থেকে বর্তমান সাংসদ অসিত কুমার মালকে মনোনীত করে।
আগামী ১৩ মে রাজ্যে নির্বাচনের চতুর্থ পর্যায়ে এই কেন্দ্র ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন