দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জয়নগর লোকসভা কেন্দ্র বেশ কয়েক বছর পর আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। আপাতদৃষ্টিতে এই কেন্দ্রে ত্রিমুখী লড়াই হলেও ঐতিহ্যগতভাবে এই কেন্দ্রে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের কিছুটা প্রভাব আছে। এছাড়াও এবার যুক্ত হয়েছে আইএসএফ। যাদের প্রার্থী বেশ কিছুটা ভোট কাটতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গত দু’বারের মত এবারেও এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী করেছে বিদায়ী সাংসদ প্রতিমা মন্ডলকে। বিজেপি প্রার্থী অশোক কান্ডারি এবং আরএসপি প্রার্থী সমরেন্দ্রনাথ মণ্ডল। মূল লড়াই এই তিন প্রার্থীর মধ্যেই। যদিও এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের প্রার্থী নিরঞ্জন নস্কর এবং আইএসএফ প্রার্থী মেঘনাদ হালদারও কিছুটা লড়াই দেবেন বলেই অভিমত স্থানীয়দের। রাজনৈতিক মহলের মতে এই দুই প্রার্থী কতটা ভোট কাটবেন তার ওপরেই নির্ভর করবে অন্য প্রার্থীদের জয় পরাজয়।
জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের সবকটিতেই তৃণমূলের বিধায়ক। গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি, জয়নগর, ক্যানিং পশ্চিম, মগরাহাট পূর্ব – এই সবকটি আসনই তফশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। এছাড়াও এই কেন্দ্রের অন্তর্গত আরও একটি বিধানসভা ক্যানিং পূর্ব। এই সাতটি আসনের মধ্যে একসময় কুলতলি এবং জয়নগর কেন্দ্রে এসইউসি-র প্রভাব ছিল। যদিও এখন সেই প্রভাব কার্যত নেই। বিগত লোকসভা নির্বাচনেও এই কেন্দ্র থেকে এসইউসি প্রার্থী জয়কৃষ্ণ হালদার ভোট পেয়েছিলেন সাকুল্যে ২.৮২ শতাংশ। ২০১৪-র নির্বাচনে এই কেন্দ্রে এসইউসি-র ভোট ছিল প্রায় ১০ শতাংশ।
তৃণমূলের হাত ধরে ২০০৯ সালে এই কেন্দ্র থেকে এসইউসি প্রার্থী জয়ী হলেও অতীতে এই আসনে বামেদেরই রমরমা ছিল। ১৯৮০ থেকে একটানা ২০০৪ পর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন আরএসপি প্রার্থী সনৎ কুমার মণ্ডল। ২০০৯ সালে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সমর্থনে এসইউসি-র তরুণ মণ্ডল জয়ী হলেও জয়ের ব্যবধান ছিল মাত্র ৫৩,৭০৫।
এবারের নির্বাচনে এই কেন্দ্রের অন্তর্গত ক্যানিং পশ্চিম, ক্যানিং পূর্ব, মগরাহাট পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে আইএসএফ তৃণমূলকে বেগ দিতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এবার জয়নগর কেন্দ্রে আইএসএফ প্রার্থী তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে অনেকটাই থাবা বসাতে পারে।
২০০৯ সাল থেকে এই কেন্দ্রে ভোট কমছে আরএসপি-র। ২০০৪-এ এই কেন্দ্র থেকে আরএসপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫৫.৮১ শতাংশ ভোট। ২০০৯-এ যা কমে হয় ৪২.৮৬। এরপর ২০১৪ তে ৩২.৫৮ এবং ২০১৯-এ একধাক্কায় আরএসপি-র ভোট নেমে যায় ৫.০১ শতাংশে। যেখানে বিজেপির ভোট ২০১৪-র ৯.৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয় ৩২.৭৭ শতাংশ।
এই কেন্দ্রের ভোটে এবার বেশ কয়েকটি বিষয় যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রথমত, আরএসপি এবং এসইউসিআই(সি)-র মধ্যে নির্বাচনী এলাকার বাম ভোটারদের বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে।
দ্বিতীয়ত, তৃণমূল এবং আইএসএফ-এর মধ্যে সাধারণ ফ্যাক্টর হল সংখ্যালঘু ভোটাররা। যারা দুই দলেরই টার্গেট এবং সেই ক্ষেত্রে এই ভোটে যে কোনও বিভাজন বিজেপির জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।
অন্যদিকে, এবার, বিজেপি প্রার্থী অশোক কান্ডারি প্রচারে দুটি বিষয়কে তুলে আনছেন। প্রথমটি হচ্ছে হিন্দু ভোট একজায়গায় করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানবিরোধী ভোটের বিভাজনের লক্ষ্যে সমস্ত বিরোধীদের কাছ থেকে সমর্থন চাওয়া।
আগামী ১ জুন জয়নগর কেন্দ্রের ১৫.৪০ লক্ষ ভোটার কার পক্ষে নিজেদের মতাধিকার প্রয়োগ করবেন তার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে ৪ জুন পর্যন্ত।
- with Agency inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন