ডায়মন্ডহারবারের বিজেপি প্রার্থী কে? রাজ্যের ৪২ কেন্দ্রের মধ্যে ৪১ কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করে দিলেও এখনও পর্যন্ত এই কেন্দ্রে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিজেপি। একাধিক নাম বাজারে ভেসে বেড়ালেও শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সিপিআইএম-এর প্রতীক-উর রহমানের সঙ্গে বিজেপির কোন প্রার্থী হাই ভোল্টেজ এই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবেন তা এখনও অনিশ্চিত।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দেবার পর একসময় তাঁর নাম এই কেন্দ্রের জন্য আলোচনায় এসেছিল। যদিও তাঁকে ডায়মন্ডহারবারে প্রার্থী না করে তমলুকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। সূত্র অনুসারে, এই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস ছেড়ে আসা কৌস্তুভ বাগচী, প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল, সোনালী গুহ-র নাম প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করেছিল বিজেপি। যদিও এই তিন নামের কোনোটিতেই এখনও পর্যন্ত সিলমোহর পড়েনি। অন্যদিকে অভিনেতা ও বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ এই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছাপ্রকাশ করলেও তাতেও এখনও সম্মতি দেয়নি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
অন্যদিকে এখনও পর্যন্ত এই কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষিত না হওয়ায় নীচুতলার বিজেপি কর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশাই লক্ষ্য করা গেছে। বহু জায়গায় দলীয় প্রতীক দেওয়ালে এঁকে রাখলেও এখনও পর্যন্ত সেখানে প্রার্থীর নাম লিখতে পারেননি দলীয় কর্মীরা।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রথম থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হলেও এই কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করার ক্ষেত্রে এত গড়িমসি কেন সেই প্রশ্নও ঘোরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহলে। এখনও প্রায় প্রতিদিনই বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচার সভার বক্তব্যে অনেকটাই জুড়ে থাকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে আক্রমণ।
এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী নিয়ে দোদুল্যমানতার সুযোগে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূলও। দলীয় নেতা কুণাল ঘোষ, জয়প্রকাশ মজুমদারদের বক্তব্যে উঠে এসেছে সেই বক্তব্যই। কুণাল ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেছেন, বিজেপি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী জোগাড় করতে পারছে না।
অপর তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের গলাতেও একই সুর। তিনি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, বিজেপির প্রার্থী তালিকায় অর্ধেকের বেশি শুভেন্দুর শিবিরের লোক। এমনকি দিলীপ ঘোষকেও নিজের কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে আদি বিজেপি এবং নব্য বিজেপির লড়াই এখন তুঙ্গে। তাই ডায়মন্ডহারবারের পরাজয় এড়াতে বিজেপি কাকে প্রার্থী করবে তা ঠিক করতে পারছে না। সম্ভবত কেউই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে রাজি হচ্ছেন না।
একসময় শোনা গেছিল বাম কংগ্রেস আইএসএফ জোটের প্রার্থী হিসেবে এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নওশাদ সিদ্দিকি। যদিও আইএসএফ সমঝোতা ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ায় এবং নওশাদ স্বয়ং এই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে রাজী না হওয়ায় শেষে বাম কংগ্রেস জোটের পক্ষ থেকে এই কেন্দ্রে তরুণ সিপিআইএম নেতা প্রতীক-উর রহমানকে দাঁড় করানো হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে প্রতীক-উর জানিয়েছেন লড়াইটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমাদের দল রুদ্রনীলবাবু বা কুণাল ঘোষের মত নয়, যে পছন্দ না হলে একটা কবিতা লিখে ফেলব। ফেসবুকে একটা পোষ্ট করব। বামপন্থী রাজনীতি যারা করেন তাঁরা জানেন আমাদের দলে সবাই নেতা, সবাই কর্মী, সবাই প্রার্থী।
প্রতিদ্বন্দ্বী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে প্রতীক-উর বলেন, ‘বড়ো নাম, বড়ো চোর।’ তিনি আরও বলেন, পুলিশ সরে গেলে তৃণমূলকে ওই কেন্দ্রে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। আগের বার ভোটের ব্যবধান বাড়িয়েছে তো বুথ দখল করে। এই কেন্দ্রে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন