কে আসল শিবসেনা অথবা কে আসন এনসিপি – দলের নাম এবং প্রতীকের দাবি নিয়ে লড়াই গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। আদালতের নির্দেশে একনাথ শিন্ধে এবং অজিত পাওয়ার এগিয়ে থাকলেও সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনী ফলাফলে এই দুই দলের ভরাডুবি হল। যার ফলে ১৫ আসনে লড়াই করেও মাত্র ৭ সাংসদ পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল একনাথ শিন্দের শিবসেনাকে। অন্যদিকে ৪ আসনে লড়াই করে মাত্র ১ সাংসদেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে অজিত পাওয়ারের এনসিপি-কে। এনডিএ শিবিরে থাকলেও এনসিপি-র জন্য এখনও কোনও মন্ত্রীপদ বরাদ্দ হয়নি। একনাথ শিন্দের শিবসেনা মাত্র একটি রাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ পেয়েছে।
মহারাষ্ট্রে অপারেশান লোটাসের মাধ্যমে ক্ষমতার হাতবদলের ঘটনা সকলেরই জানা। যেভাবে উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে শিবসেনা ভেঙে একনাথ শিন্ধেকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল সে ঘটনাও সকলেরই জানা। পরে এনসিপি ভেঙে এই শিবিরে যোগ দেন শারদ পাওয়ারের ঘরের লোক, নিকট আত্মীয় অজিত পাওয়ার। যদিও লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে এই দুই পক্ষ থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মহারাষ্ট্রের মানুষ। এমনকি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিজেপি থেকেও।
বরং তাঁরা গতবারের তুলনায় অনেক বেশি আসনে জয়ী করেছেন ইন্ডিয়া মঞ্চের কংগ্রেস, শিবসেনা (ইউবিটি), এনসিপি(এসপি)-কে। ভোট শতাংশের হারে এনডিএ এবং ইন্ডিয়া গায়ে গায়ে থাকলেও আসনের বিচারে এনডিএ-র চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে ইন্ডিয়া। নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পরেই খারাপ ফলাফলের দায় নিয়ে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন রাজ্যের বিজেপি নেতা ও উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। যদিও এ যাত্রা তাঁকে নিরস্ত করেছেন অমিত শাহ।
এবারের নির্বাচনে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দের শিবসেনার ভোট কমেছে ১০.৫৫ শতাংশ এবং উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারের এনসিপি-র ভোট কমেছে ১১.৯৬ শতাংশ। বিজেপির ভোট কমেছে ১.৬৬ শতাংশ। কমেছে আসনও। ২৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজেপির জয় এসেছে মাত্র ৯ আসনে। গতবার যা ছিল ২৩। এনডিএ শিবিরের মোট প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার ৪৩.৫৫% (২,৪৮,১২,৬২৭)। এনডিএ-র গতবারের ৪১ আসনের তুলনায় এবার আসন সংখ্যা নেমে এসেছে ১৭তে। অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটের প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৩.৭১% (২,৫০,১৫,৮১৯)। যার মধ্যে শিবসেবা (ইউবিটি) পেয়েছে ১৬.৫২ শতাংশ ভোট, এনসিপি (এসপি) পেয়েছে ১০.২৭ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেস পেয়েছে ১৬.৯২ শতাংশ ভোট। মোট আসন ৩০।
আসনের বিচারে ১৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস জয়ী হয়েছে ১৩ আসনে, ১০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এনসিপি (এসপি) জয়ী হয়েছে ৮ আসনে এবং ২১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শিবসেনা (ইউবিটি) জয়ী হয়েছে ৯ আসনে। ২০১৯ নির্বাচনের অনুপাতে বিজেপির আসন কমেছে ১৪টি, শিবসেনার ৬টি। সেখানে কংগ্রেসের আসন বেড়েছে ১২টি, এনসিপি শারদ পাওয়ার এবং শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠীর আসন বেড়েছে যথাক্রমে ৫ এবং ৪টি। রাজ্যের মোট ৪৮ আসনের মধ্যে ৩০টিতেই জয়ী হয়েছে মহাবিকাশ আঘাদি তথা ইন্ডিয়া মঞ্চ।
এনডিএ শিবিরের জয়ী আসনগুলির মধ্যে মুম্বাই উত্তর পশ্চিম আসনে কান ঘেঁষে জয় এসেছে শিবসেনা শিন্ধে গোষ্ঠীর প্রার্থীর। এই কেন্দ্রে তিনি জয়ী হয়েছেন মাত্র ৪৮ ভোটে। যা এবারের লোকসভা ভোটে কোনও জয়ী প্রার্থীর সবথেকে কম ব্যবধান। বলা যেতে পারে হাতছাড়া হতে হতে বেঁচে গেছে এনডিএ-র এই আসন।
উল্লেখযোগ্যভাবে এবারের নির্বাচনে মহারাষ্ট্রের সবকটি অঞ্চলেই ভালো ফলাফল করেছে ইন্ডিয়া মঞ্চর নেতৃত্ব দেওয়া কংগ্রেস। পশ্চিম মহারাষ্ট্র, বিদর্ভ, মারাঠওয়াড়া, মুম্বাই, উত্তর মহারাষ্ট্র এবং থানে কোঙ্কন – এই ছ’টি অঞ্চলেই কংগ্রেস, শিবসেনা ইউবিটি এবং এনসিপি শারদ পাওয়ারের নজরকাড়া ফলাফল। যার মধ্যে মারাঠওয়াড়াতে বিজেপির ক্ষতি সবথেকে বেশি। ২০১৯-এর ফলাফলের অনুপাতে এই অঞ্চলের ৮ আসনের একটিতেও জয়ী হতে পারেনি বিজেপি। গতবার জয় পাওয়া ৪ আসনও এবার হাতছাড়া হয়েছে। যে অঞ্চল থেকে ৩টি আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস, শিবসেনা ইউবিটি ৪ আসনে এবং এনসিপি শারদ পাওয়ার ১ আসনে।
বিদর্ভ এবং পশ্চিম মহারাষ্ট্র অঞ্চলের ১০ এবং ১১ আসনের মধ্যে বিজেপির জয় এসেছে ২ এবং ২ আসনে। দুই অঞ্চলেই ৩টি করে আসন হারিয়েছে বিজেপি। এছাড়াও মুম্বাই অঞ্চলে ২টি, উত্তর মহারাষ্ট্রে ৩টি আসন হারিয়েছে বিজেপি। শুধুমাত্র থানে কোঙ্কন অঞ্চলে বিজেপির ১টি আসন লাভ হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন