মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে এনডিএ শিবির তথা মহাযুতি (Mahayuti) জোটের আসন রফা নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। চলতি বছরের ২৬ নভেম্বর ২৮৮ আসন বিশিষ্ট মহারাষ্ট্র বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে। অর্থাৎ তার আগেই শেষ করতে হবে নির্বাচন পর্ব। তাই মহাযুতি হোক বা মহা বিকাশ আঘাদি – দুই শিবিরেই জোর রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।
মহাযুতির তিন প্রধান শরিক বিজেপি, শিবসেনা – একনাথ শিন্ধে এবং এনসিপি – অজিত পাওয়ার – এরা কোন দল কত আসনে লড়াই করবেন তা নিয়েই আপাতত বিবাদ তুঙ্গে। সরকারিভাবে এখনও কোনও চূড়ান্ত আলোচনা না হলেও তিন রাজনৈতিক দলই নিজেদের দাবি পেশ করেছে। যার মধ্যে বিজেপির দাবি ১৫০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার।
যদিও এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নারায়ণ রাণে শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। ওইদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাণে জানান, বিজেপির উচিত ২৮৮ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। আমি চাই বিজেপি ২৮৮ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক।
বিজেপির এই দাবির আগেই মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ধের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা জানিয়ে রেখেছে তারা ১০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। অন্যদিকে উপ মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারের এনসিপি-অ কমপক্ষে ৮০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে অনড়। এর আগে অজিত পাওয়ার জানিয়েছিলেন এনসিপি ১০০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অজিত পাওয়ার দলের সিনিয়র নেতাদের কাছেই বর্তমানে যথেষ্ট কোণঠাসা। কারণ তাঁরা স্পষ্টই বলে দিয়েছেন চূড়ান্ত আলোচনায় সময় ৮০ থেকে ৯০ আসনের কম আসনের রফাতে অজিত যেন রাজী না হন। এক্ষেত্রে তিন রাজনৈতিক দলের অনড় মনোভাব আসন সমঝোতার আলোচনায় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই রাজনৈতিক মহলের অনুমান।
রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও বিগত লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে মহাযুতির ফলাফল অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। রাজ্যের ৪৮ আসনের মধ্যে এবার মহাযুতি জয়ী হয়েছে মাত্র ১৭ আসনে। বাকি ৩০ আসনে জয়ী হয়েছে ইন্ডিয়া মঞ্চ এবং ১টি আসনে নির্দল প্রার্থী।
লোকসভা নির্বাচনে ৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অজিত পাওয়ারের শিবসেনা জয়ী হয়েছে ১টি মাত্র আসনে। অজিত পাওয়ারের নিজের ঘাঁটি বলে পরিচিত বারামতীতেও পরাজিত হয়েছে এনসিপি পাওয়ার গোষ্ঠী। অন্যদিকে ১৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একনাথ শিন্ধের শিবসেনা জয়ী হয়েছে ৭ আসনে এবং ২৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজেপি জয়ী হয়েছে ৯ আসনে।
ফলে আসন রফার আলোচনার সময় বিজেপি বা শিবসেনার তুলনায় অনেকটাই ব্যাকফুটে অজিত পাওয়ারের এনসিপি। যদিও পাওয়ার শিবিরের নেতৃত্বের বক্তব্য, গতবারের জয়ী ৫৪ আসন (এনসিপি ভাঙার আগে) ছাড়াও কমপক্ষে আরও ৩০ টি আসনে এনসিপি-কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দিতে হবে। যে দাবি কতটা বাস্তবসম্মত প্রশ্ন তা নিয়েও। কারণ অবিভক্ত শিবসেনা ২০১৯ বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ১২০ আসনে।
অন্য দিক থেকে নিজের দলের মধ্যেও যথেষ্ট চাপে আছেন অজিত পাওয়ার। কারণ সূত্র অনুসারে, গত বছরের জুলাই মাসে এনসিপি ভাঙার সময় অজিত পাওয়ারের সঙ্গে যারা যারা শারদ পাওয়ারের শিবির ছেড়ে এসেছিলেন তাদের অনেকেই এখন ফের শারদ পাওয়ার শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। যা আরও চাপ বাড়িয়েছে অজিত পাওয়ারের। এই পরিস্থিতিতে আসন রফা নিয়ে বিজেপির সঙ্গে দর কষাকষি করে যদি নিজের দলের জন্য কমপক্ষে ৮০ আসন তিনি জোগাড় করতে না পারেন সেক্ষেত্রে তার দল আদৌ থাকবে কিনা সেটাই এখন বড়ো প্রশ্ন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন