মেঘালয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি একদিকে যেমন আকর্ষণীয় অন্যদিকে তেমনই বিভ্রান্তিকর। ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের প্রাক্তন জোটের অংশীদার কনরাড সাংমা এবং তার ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) উপর তাদের আক্রমণ শানাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতে এনপিপি শাসনের অধীনে মেঘালয় দেশের এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্যে পরিণত হয়েছে। যদিও বিজেপি গত পাঁচ বছর ধরে এনপিপির নেতৃত্বাধীন সরকারের অংশীদার ছিল এবং এখনও সেই অংশীদারিত্ব বজায় আছে।
বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য অনুসারে, কনরাড সাংমার দলের সাথে তাদের কোনো জোট নেই। যদিও এনপিপি জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) একটি অংশ। বিজেপির রাজ্য সভাপতি, আর্নেস্ট মাওরি, পার্বত্য রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আইএএনএস-এর সঙ্গে কথা বলেছেন।
প্রশ্ন: একাধিক বিভ্রান্তি রয়েছে। এনপিপি ও বিজেপি কি এখনও মিত্র?
আর্নেস্ট মাওরি: মেঘালয়ে, আমরা এনপিপি-র সাথে কোনো জোট করিনি, এবং ২০১৮ সালেও আমরা তা করিনি। আমরা আমাদের নিজেদের মত লড়াই করছি, এবং তারা তাদের ব্যক্তিগত শক্তিতে লড়াই করছে। এনপিপি গত পাঁচ বছর ধরে বড় আকারের দুর্নীতিতে জড়িত এবং আমাদের দল দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের অবস্থান নিয়েছে।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনিও এনপিপি-এর নেতৃত্বাধীন সরকারের অংশ ছিলেন।
আর্নেস্ট মাওরি: হ্যাঁ, আমরা এমডিএ সরকারে ছিলাম। কিন্তু বিজেপির মাত্র দু’জন বিধায়ক এবং একজন মন্ত্রী ছিল এবং আমাদের মন্ত্রিত্বে কোনো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ছিল না। বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য যে সমস্ত বিভাগে গত পাঁচ বছরে চূড়ান্ত দুর্নীতি হয়েছে সেইসব দপ্তরে এনপিপি বা তাদের জোটের অংশীদাররা ছিল।
প্রশ্ন: দুর্নীতি সম্পর্কে আপনারা কীভাবে জানতে পারেন?
আর্নেস্ট মাওরি: গত এক বছরে আমরা প্রচুর আরটিআই আবেদন করেছি, আমরা দেখেছি বর্তমান সরকারের অধীনে মেঘালয়ে কীভাবে ব্যাপক দুর্নীতি চলছে। আমাদের কাছে সব রেকর্ড আছে।
প্রশ্ন: তাহলে আপনারা কেন সরকার ছাড়লেন না এবং আশ্চর্যজনকভাবে আপনি আজ পর্যন্ত একজন মন্ত্রী আছেন!
আর্নেস্ট মাওরি: দেখুন, বিজেপি একটি জাতীয় দল এবং আমরা স্থানীয় পর্যায়ে জোট ত্যাগ বা জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। মেঘালয়ে কী ঘটছে সে সম্পর্কে আমরা দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছিলাম এবং এই বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
এনপিপি এখানে এনডিএ এবং নর্থ ইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনইডিএ) এর একটি অংশ হতে চলেছে। তাই, এনইডিএ চেয়ারম্যান বা দিল্লিতে দলের নেতাদের এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি কি NEDA চেয়ারম্যান হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সাথে দুর্নীতির বিষয়ে আলোচনা করেছেন?
আর্নেস্ট মাওরি: হ্যাঁ, হ্যাঁ। গত কয়েক বছরে আসামের মুখ্যমন্ত্রী যখনই আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন, তখনই আমরা তাঁকে দুর্নীতির কথা বলেছি। তিনি আমাদের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রশ্ন: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে এনপিপি ক্ষমতায় ফিরলে বিজেপি সরকারে ফিরে আসার দরজা খোলা রেখেছে।
আর্নেস্ট মাওরি: না, বিষয়টাকে সেভাবে দেখা উচিত নয়। এবার আমরা রাজ্যের ৬০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছি। আমরা একটি ভাল ফলাফলের প্রত্যাশা করছি। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে, আমরা এমন দলগুলির সঙ্গে যেতে পারি যাদের গায়ে দুর্নীতির দাগ নেই।
প্রশ্ন: কিন্তু, আপনার কাছে বেছে নেওয়ার জন্য খুব কম বিকল্প আছে। আপনি কংগ্রেস বা তৃণমূলের সঙ্গে যেতে পারবেন না।
আর্নেস্ট মাওরি: এই দুই দলের সঙ্গে যাওয়া অসম্ভব। এই মুহূর্তে, আমরা যতটা সম্ভব আসন জেতার দিকে মনোনিবেশ করছি। বিধানসভার মোট ৬০টি আসনের মধ্যে আমরা ৩৪টিতে জয়লাভ করতে পারি।
প্রশ্ন: কনরাড সাংমা এবং মুকুল সাংমার মধ্যে কে সেরা মুখ্যমন্ত্রী
আর্নেস্ট মাওরি: আমি তাদের মধ্যে তুলনা করতে পারি না। কনরাড সাংমার দুর্নীতির কথা আগেই বলেছি। তৃণমূল এখানে জিতলে রাজ্যে বড় আকারে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ঘটবে। আমরা অনেক দিন ধরে এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, এবং আমরা এখানে আরও বাংলাদেশীকে 'আমন্ত্রণ' জানাতে পারি না।
প্রশ্ন: কিন্তু বিজেপি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে এসেছে।
আর্নেস্ট মাওরি: প্রথমত, সিএএ-তে একটি টাইমলাইন তৈরি করা হয়েছে যার পরে বাংলাদেশের কোনও লোককে এখানে থাকতে দেওয়া হবে না। তা ছাড়াও, কেন্দ্র তিন বছরেরও বেশি সময় আগে CAA-র কথা বলেছিল। আপনি কোন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ সমস্যা দেখেছেন? উত্তর হল – ‘না’।
প্রশ্ন: মেঘালয়ের মতো রাজ্যে, যেখানে অন্তত ৯০ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্ম অনুসরণ করে, আপনি কি বিশ্বাস করেন যে সাধারণ মানুষ গোরুর মাংস নিষিদ্ধ, সিএএ এবং অন্যান্য বিষয়ে বিজেপির কট্টরপন্থী অবস্থানকে মেনে নিতে প্রস্তুত?
আর্নেস্ট মাওরি: কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার ৯ বছর হয়ে গেছে এবং আমরা এই সময়ে কোনো চার্চকে আক্রমণের মুখে দেখিনি। গোরুর মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আমি গোরুর মাংস খাই এবং আমি বিজেপিতে আছি, এতে কোনো সমস্যা নেই। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে মেঘালয়ের মানুষ এবার বিজেপির সঙ্গে আছে। সেটা দেখতে পাবেন ২ মার্চ।
(Except for the headline, this story has not been edited by People's Reporter and is translated and published from a syndicated feed.)
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন