ঝাড়খন্ড এবং মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের পাশাপাশি দেশের বেশ কিছু বিধানসভা এবং লোকসভা আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই তালিকায় যেসব রাজ্য আছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল রাজস্থান। আগামী ১৩ নভেম্বর এই রাজ্যের ৭ আসনে উপনির্বাচন। যা নিয়ে ক্রমশই চড়ছে রাজনৈতিক পারদ।
রাজস্থানের ৭ কেন্দ্রের উপনির্বাচন রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মার কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ। গত বছরেই বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হবার পর রাজনৈতিক মহলকে বিস্মিত করে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ভজন লাল শর্মাকে বেছে নিয়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বকে সরিয়ে তাঁকে বেছে নেওয়ায় কিছুটা ক্ষোভও সৃষ্টি হয়েছিল বিজেপির অন্দরে।
মুখ্যমন্ত্রী হবার পর থেকে রাজস্থানে যেকটি নির্বাচন হয়েছে তাতে এখনও পর্যন্ত খুব একটা ভালো ফল দেখাতে পারেননি বিজেপি নেতা ভজন লাল শর্মা। তাঁর ক্ষমতাসীন হবার এক মাসের মধ্যেই করণপুরা আসনের উপনির্বাচনে পরাজিত হয় বিজেপি। এই আসনে কংগ্রেস প্রার্থীর মৃত্যুতে নির্বাচন স্থগিত ছিল।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও রাজস্থানে ফলাফল ভালো হয়নি বিজেপি তথা এনডিএ-র। রাজ্যে ক্ষমতাসীন হওয়া সত্ত্বেও লোকসভা নির্বাচনে ২৫ আসনের মধ্যে ১১টিতে পরাজিত হয় বিজেপি। যেখানে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ২৫টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই জয়ী হয়েছিল বিজেপি।
রাজস্থানের যে ৭ আসনে আগামী ১৩ নভেম্বর নির্বাচন তার মধ্যে আছে ঝুনুঝুনু, দৌসা, দেওলি উনিয়ারা, চোরাসাই, সালুমবেড়, রামগড় এবং ক্ষীণসার। যার মধ্যে ৪ আসন কংগ্রেসের দখলে ছিল। এই ৭ আসনের মধ্যে ৫টি আসনের বিধায়করা লোকসভায় নির্বাচিত হবার কারণে আসনগুলি শূন্য হয়েছে।
হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর বিজেপি এই উপনির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। যদিও যে সব অঞ্চলে উপনির্বাচন হতে চলেছে গত লোকসভা নির্বাচনে সেই অঞ্চলের দৌসা, করৌলি ঢোলপুর, টঙ্ক সোয়াই মাধোপুর এবং ভরতপুর লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। ফলে এই উপনির্বাচন বিজেপি নেতৃত্ব এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মার কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উপনির্বাচনে কংগ্রেসের থেকে কম আসন পেলে প্রশ্নের মুখে পড়বে ভজন লাল শর্মার নেতৃত্ব।
এই ৭ আসনে ঝুনঝুনু থেকে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে অমিত ওলা-কে। এছাড়াও রামগড় থেকে অয়ন জুবায়ের, দৌসা থেকে দীনদয়াল বৈরওয়া, দেওলি-উনিয়ারা থেকে কস্তুর চাঁদ মীনা, ক্ষীণভসার থেকে রতন চৌধুরী, সালম্বর (এসটি) থেকে রেশমা মীনা এবং চোরাসি (এসটি) থেকে মহেশ রোট কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন৷
অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী হিসেবে দৌসা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রতিমন্ত্রী কিরোদি লাল মীনার ভাই জগমোহন মীনা। এছাড়াও ঝুনঝুনু থেকে রাজেন্দ্র ভাম্ভু, সালুম্বর থেকে শান্তা দেবী মীনা, দেওলি-উনিয়ারার থেকে রাজেন্দ্র গুর্জার, রামগড় থেকে সুখবন্ত সিং, ক্ষীণভসার থেকে রেবন্ত রাম ডাঙ্গা বিজেপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ঝুনুঝুনু কেন্দ্র থেকে গত বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী ব্রিজেন্দ্র সিং ওলা। তিনি বিজেপি প্রার্থীকে ২৮,৮৬৩ ভোটে পরাজিত করেছিলেন।
রামগড় কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী জুবের খান। তিনি পেয়েছিলেন ৯৩,৭৬৫ ভোট এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এএসপিকে-র সুখবন্ত সিং পেয়েছিলেন ৭৪,০৬৯ ভোট। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী তৃতীয় স্থানে ছিলেন।
দৌসা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী মুরারী লাল মীনা। তিনি বিজেপি প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন ৫০,৯৪৮ ভোটে।
দেওলি উনিয়ারা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন হরিশ চন্দ্র মীনা। তিনি ১৯,১৭৫ ভোটে বিজেপি প্রার্থী পরাজিত করেছিলেন।
সালম্বর কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী অমৃতলাল মীনা ১৪,৬৯১ ভোটে পরাজিত করেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী রঘুবর সিং মীনাকে।
২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষীণভসর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন আরএলপি প্রার্থী হনুমান বেণীওয়াল। তিনি বিজেপি প্রার্থী ২,০৫৯ ভোটে পরাস্ত করেছিলেন। কংগ্রেস এই কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে ছিলেন।
চোরাসি কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন বিএপি প্রার্থী রাজকুমার রোট। তিনি তাঁর নিকটতম বিজেপি প্রার্থী সুশীল কাটারাকে ৬৯,১৬৬ ভোটে পরাস্ত করেন। কংগ্রেস এই কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে ছিল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন