লোকসভা নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ভোট করানোর কথা শুনলোই না সুপ্রিম কোর্ট। তবে ইভিএম-র সাথে সমস্ত ভিভিপ্যাট গণনার বিষয় নিয়ে এখনই নির্দিষ্ট কোনো রায় দিল না দেশের শীর্ষ আদালত।
ইভিএম-র পাশাপাশি ভিভিপ্যাট গণনা এবং ব্যালট পেপারে ভোট করানো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিল অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (ADR)। সংস্থার তরফে আইনজীবী ছিলেন প্রশান্ত ভূষণ। মামলাটির শুনানি হয় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চে।
মামলাকারীর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, পূর্বে ব্যালট পেপারেই নির্বাচন হতো। তাই ব্যালট পেপার থাকতেই পারে। বেশীরভাগ ইউরোপীয় দেশগুলি বর্তমানে ব্যালট পেপারে ফিরে আসছে। এমনকি জার্মানির উদাহরণও তুলে ধরেন ওই আইনজীবী।
ভূষণ আরও জানান, আমরা বলছি না যে ইভিএম-এ কারচুপি হচ্ছে বা কারচুপি করা হচ্ছে। আমরা শুধু বলছি ইভিএম-র সাথে ভিভিপ্যাটগুলির স্লিপগুলিকেও যেন গোনা হয়। কারণ একটি চিপের মাধ্যমে ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট কাজ করে। সেই চিপ বিকল হলে তখন সমস্যা হতে পারে।
আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে বিচারিপতি সঞ্জীব খান্না বলেন, আমার বয়স ৬০ বছর হতে চললো। আমি আগে দেখেছি ব্যালট পেপার গণনা নিয়ে কীরকম সমস্যা হতো। আপনি হয়তো ভুলে যেতেই পারেন। কিন্তু আমি ভুলিনি। ভারতে এখন ভোটারের সংখ্যা ৯৭ কোটি। আপনি যদি সমস্যার কথা ভুলে যান তাহলে আমি দুঃখিত।
বিচারপতি প্রশ্ন করেন, মানুষ যে ব্যালট পেপারে নির্বাচন চাইছে তা বুঝছেন কীভাবে? মামলাকারীর আইনজীবী জানান একটি সমীক্ষা হয়েছিল। বেসরকারি সংস্থার দ্বারা সেগুলো করা হয়। সেই সমীক্ষা থেকেই এই তথ্য উঠে এসেছে। পাল্টা বিচারপতি দত্ত এবং বিচারপতি খান্না বলেন, এই ধরণের সমীক্ষা আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। কারণ আপনাদের দেওয়া সমীক্ষার রিপোর্টে এক তথ্য আছে। অন্য কোনো সংস্থা যদি এমনই সমীক্ষা চালিয়ে ভিন্ন তথ্য পেশ করে তখন কী করা হবে? তাই অযথা বিতর্কে না জড়ানোই ভালো।
বিচারিপতি খান্নার কথায়, ‘‘মানুষের হস্তক্ষেপ না থাকলে যন্ত্র ঠিক ফলাফলই দেয়। হস্তক্ষেপ হলেই সমস্যা। যন্ত্রের কাছাকাছি থেকে মানুষই অবৈধ ভাবে ব্যবস্থার বদল ঘটাতে পারে।’’
এছাড়া বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি ভারতের সাথে জার্মানির তুলনা করবেন না। আমি শুধু আমার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের কথাই বলি। এই একটা রাজ্যেই জার্মানির থেকে বেশি লোকের বসবাস। এখন যদি ব্যালট পেপারে ভোট করানো হয় তাহলে কী হবে ভেবে দেখেছেন?
মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ এপ্রিল।
এর আগে মামলাকারী জানিয়েছিলেন, নির্বাচনের জন্য সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ২৪ লক্ষ ভিভিপ্যাট কিনেছে। কিন্তু সিংহভাগ ভিভিপ্যাটের স্লিপ গোনাই হয়না। প্রতিটি বিধানসভায় মাত্র বাছাই করা ৫টি ভিভিপ্যাটের স্লিপ গণনা হয়। ফলে ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের গণনার মধ্যে স্বচ্ছতা থাকে না। সুপ্রিম কোর্ট নোটিশ দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে বলেছিল সমস্ত ভিভিপ্যাট গণনার ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন