“আমরা কেবল পিছাবো? কুসংস্কারের ক্ষেত্রেও বাঙলা এক নম্বর হবার দিকে উল্টো পায়ে এগুচ্ছে?” ঠিক এই ভাষাতেই তিলজলায় তান্ত্রিক কার্যকলাপে শিশু হত্যার ঘটনা এবং বীরভূমে ডাইনি অপবাদে আদিবাসী দম্পতি হত্যার তীব্র প্রতিবাদে মুখর হলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী। তাঁর প্রতিবাদে উঠে এসেছে কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের মুখ গোবিন্দ পানসারে, কালবুর্গির নাম। বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে সাম্প্রতিক দুই ঘটনার বিরুদ্ধে তিনি নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এর আগে এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ।
এদিনের পোষ্টে স্বপ্নময় চক্রবর্তী লেখেন, “শুধু তিলজলায় তান্ত্রিক কর্মে শিশু হত্যা? গত এক বছরে এরকম দশ/বারোটা ঘটনা পড়েছি কাগজে। এত এগিয়ে থাকা এই বিশ্বে আমরা এখনো আদিম ম্যাজিক বিশ্বাস, যুক্তিহীন কুচিন্তাজনিত আকাজগুলিকে পুষে রেখেছি, লজ্জা নেই।”
নিজের পোষ্টে বর্ষীয়ান সাহিত্যিক আরও লেখেন, “টি ভি চ্যানেলে জোব্বা পরা তিলক কাটা তান্ত্রিকরা কালা জাদুর মহিমা বাখান করছে। কেউ বশীকরণের "বৈজ্ঞানিক" যুক্তি দিচ্ছে, কেউ কঠিন" শব সাধনার" মাহাত্ম্য কীর্তন করছে। আমরা আমোদ গেঁড়ে গাড়ল দল কিচ্ছুটি বলছিনা। রেজিস্টার্ড বুদ্ধিজীবীগণ যথাস্থানে কিলবিলোচ্ছে। দুর্বল দু’তিনটি বিজ্ঞান পত্রিকা এবং সংগঠন অরণ্যে রোদন করছে। কিছু লেখক উঠেছে, ওঁরা তন্ত্র-মন্ত্র, শ্মশান ভস্ম কবরের আজাব, ভূত-প্রেত শাকচুন্নি-ডাইনি লিখছে, কিছু প্রকাশক ছাপছে। রমরম করে বিক্রি হচ্ছে। আর ওদিকে আমার দেশের মানুষ পড়শীকে ডাইনি সাব্যস্ত করে গরীব অসহায় মহিলাকে মেরে ফেলছে, সন্তান লাভে অন্য শিশু মারছে।
তিনি আরও লেখেন, "এক তান্ত্রিক বাবার দরবারে টর্নড জিন্স, শ্লিভলেস ছোট চুল আধুনিকাকে হাত জোড়া করে বসে থাকতে দেখছি। এ নিয়ে বড় পত্রিকায় লেখা পাঠিয়েছি একাধিক বার। ছাপেনি। তান্ত্রিক-জ্যোতিষরা যে ওদের পুষ্টিকর বিজ্ঞাপন দেয়।"
ওই পোস্টেই তিনি লিখেছেন, "আসলে আমাদের সামগ্রিক ক্ষয়রোগের এটাও উপসর্গ। চাকরি চুরি, নদী - অরণ্য দখল, টোকাটুকি এসব যখন প্রায় জায়েজ করে দেয়া গেছে, তবে যাদুটোনাও অলরাইট। যদি চুরিকে জায়েজ করতে যুক্তি দেওয়া হয় ঐ আমলে ও তো হয়েছিল, অমুক রাজ্যেও হয়, একই যুক্তি অমুক সময়ে সহমরণ ছিল, পুকুর খননের আগে জ্যান্ত শিশু পুঁতে দেওয়া হতো, নরবলি হতো, আফ্রিকা বা ব্রাজিলের অমুক উপজাতি এসব করে থাকে তবে আমাদের কী দোষ?"
ছাত্র যুবদের এই আন্দোলনে যুক্ত হবার আহ্বান জানিয়ে তিনি লেখেন, "অথচ আমাদের আইন আছে। drug & magic remedy act আছে। প্রয়োগ নেই। এর যথাযথ প্রয়োগের জন্য লড়েছেন গোবিন্দ পানেসার, কালবুর্গি। আমাদের অশোক ব্যানার্জি, বিজন সারেংগিরা মারা গেছেন। প্রবীর ঘোষ অসুস্থ, বিবর্তন, ক্যানিং যুক্তিবাদী, বিজ্ঞান মঞ্চ এমন কিছু মানুষ বা সংগঠন এখনো আছে, কিন্তু ব্যাপক গণআন্দোলন চাই। ছাত্র-যুব আন্দোলনে যুক্ত হোক এই ইস্যুতে। শ্রমিক-কৃষকরা প্রতিবাদে মুখর হোক।"
মঙ্গলবার এক প্রেস বিবৃতিতে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ-র পক্ষ থেকে বীরভূম এবং তিলজলার ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৬ তারিখ বীরভূমের আহমেদপুরে এক দম্পতিকে ডাইনি সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা এবং গতকাল খোদ কলকাতা শহরের বুকে তিলজলায় এক সাত বছরের শিশুকন্যাকে তান্ত্রিকের পরামর্শে নৃশংসভাবে হত্যা করার ঘটনার প্রেক্ষিতে যাবতীয় কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠিত করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন